এম এস রহমানঃ
আফরোজা পারভীন সীমা একাধারে একজন শিল্পী এবং একজন বাস্তববাদী লেখিকাও বটে। যদিও তিনি নিজে এ পরিচয় দিতে মোটেও অভ্যস্থ নন। শিল্পী হয়েও সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন প্রচার বিমুখ মানুষ।
সরকারী চাকরিজীবী বাবার কর্মস্থল ঢাকাতেই হওয়ায় তার জন্ম এবং বেড়ে উঠাও এ ঢাকা শহরেই। শৈশবে স্কুল জীবনের লেখাপড়া শুরু করেন ঢাকার একটি স্বনামধন্য স্কুলে। কলেজ পেরিয়ে অত্যন্ত সফলতার সাথে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক(সম্মান) এবং স্নাতোকত্তোর ডিগ্রী অর্জন করে নিষ্ঠার সাথে কর্মক্ষেত্রে মনোনিবেশন করেন এবং ইত্যবসরে তিনি ফাইন্যান্স বিষয়ে এমবিএ
ডিগ্রী অর্জন করেন।
ছোটবেলা থেকেই শিল্পী আফরোজা পারভীন সীমা গানের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। নিজের আগ্রহ এবং বাবা ও মায়ের উৎসাহে
ঢাকা শহরের নামিদামি ওস্তাদের কাছে শৈশব থেকেই গান শেখেন এবং শিশু শিল্পী হিসাবে ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন পরিমন্ডলে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন।
গানের অসামান্য অবদানের জন্য তিনি শিশু একাডেমী পুরস্কার প্রতিযোগীতায় জাতীয় পর্যায়ে দু’দুরাব প্রথম স্থান অধিকার করে নিজের শ্রেঠ্যত্বের প্রমাণ করেন।
অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে শিল্পী সহজেই মানিয়ে নিতে পারেন এবং যে কোনো বিষয়ই তিনি অতি সহজেই আয়ত্ব করতে পারেন। সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ এবং সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলা এটা তার সহজাত প্রবৃত্তি। এছাড়া বাংলা এবং ইংরেজিতে সমান পারদর্শী হওয়ায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গান করা, স্টেজ প্রোগ্রামসহ টিভি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন সুলোলিত কণ্ঠশিল্পী আফরোজা পারভীন সীমা।
গুণী এ শিল্পী বর্তমানে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে পদস্থ কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরীরত আছেন। শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও কঠিন পরিশ্রমী ও অত্যন্ত অমায়িক স্বভাবের এ মানুষটির মুখে সারাক্ষণ একটা প্রাণোচ্ছল হাসি লেগেই আছে।
গান যে এ শিল্পীর রক্তে মিশে আছে, তাইতো সময় পেলেই রেওয়াজ করেন। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরে গানের চর্চা করা খুব কঠিন তারপরও থেমে থাকে না তার গানের চর্চা । বিনয়ী এ শিল্পী গানকে মনে প্রাণে ভালো বাসেন, তবে গান তার নেশা হলেও পেশা নয়। নিজের প্রচারণা বাড়ানোর জন্য কারো কাছে ধর্ণা দেওয়া সেটাও তার রুচি বিরুদ্ধ। নিজের সম্মান বিসর্জন দিয়ে আত্মপ্রচার এ গুণীশিল্পীর একবারেই পছন্দ নয়। গান গেয়ে উপার্জন করতে হবে বা গানের মাধ্যমে তার প্রচার হতে হবে এ নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত বিনয়ী ও নির্লোভ এ শিল্পী আরো দশজন সাধারণ নারীর মতোই সাদাসিধে জীবনযাপন করতে অভ্যস্থ। কর্মজীবনে শত ব্যস্ততার মাঝেও ধর্মীয় বিধানগুলো তিনি পুরোপুরি মেনে চলেন। সংস্কৃতিমনা হয়েও শিল্পী আফরোজা সীমা ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি অত্যন্ত অনুরক্ত ও শ্রদ্ধাশীল।
শিল্পী আফরোজা পারভীন সীমার সাথে কথা হতেই বিভিন্ন সময়ে টেলিভিশনে এবং ইউটিইবে তিনি যে সকল গান করেছের একে একে তার অনেকগুলো আমাদেরকে শুনালেন। সত্যিই অসাধারণ তার গানের গলা এবং তার গাওয়া গানগুলোও
শ্রোতামুগ্ধ করার মতোই বটে।
একজন গুণী শিল্পী হয়েও তার ভিতরে কোনো প্রকার অহংকার বোধ নেই। আধুনিক, নজরুল, রবীন্দ্র সংগীতনহ গানের প্রতিটা ক্ষেত্রে আফরোজা পারভীন সীমার ভালো দখল রয়েছে। তবে পুরানো দিনের গানের প্রতি তার আলাদা টান রয়েছে।
ইউটিউবে শিল্পী সীমার গানের সংখ্য একবারে কম নয়- “আজ মন চাই আমি হারিয়ে যাব—-”, “সোনা বন্ধু তুই আমারে করলি রে দেওয়ানা—–”, “বিমূর্ত এ রাত্রি আমার মৌনতা সুতোয় বোনা একটি রঙিন চাদর—-”, “তখন তোমার একুশ বছর বোধহয় আমি তখন অষ্টাদশীর ছোঁওয়ায়—”, “চোখের ভিতর স্বপ্ন থাকে, স্বপ্ন বাঁচায় জীবনটাকে —”, “তুমি আমার প্রথম সকাল, একাকী বিকেল, ক্লান্ত দুপুর বেলা—-”, “ও মন রমজানেরও রোজার শেষে এলো—-”, “তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগণের তারা—”, “যদি বন্ধু হও যদি বাড়াও হাত কেন থামবে ঝড়—-”, “শত যনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে—-”, “সোনর ও
পালঙ্কের ঘরে লিখে রেখে ছিলেম তারে—–”, “তুমি আমার এমনই একজন—-”, “যা-রে যারে উড়ে যারে পাখি—-”, “একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে ওগো বন্ধু—-”, “ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা এ মাধবী রাত আসেনিতো
বুঝি—”, “এভরি নাইট ইন মাই ড্রিম আই সি ইউ(ইংলিশ)” গান সহ তার আরো আরো গান শুনতে ইউটিউব (www.youtube.com) লিখে https://cutt.ly/GiTpWEK সার্চ করলে অথবা shima লিখে সার্চ দিলে শোনা যাবে গুণী এ শিল্পীর সুরেলা মধুকণ্ঠী অসাধারণ প্রাণবন্ত গানগুলো।