তিন বছর পার হলেও কান্না থামেনি পেট্রোল বোমায় নিহত স্বজনদের।
২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৮ জন নিহত হয়। বর্তমানে নিহতের পরিবাররা খুব বেশি ভাল নেই। অনেকে পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
অনেকে স্ত্রী, সন্তানকে হারিয়ে একাকিত্ব দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন।
৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলার পাঁচপীর বাজার হতে ঢাকাগামি নাপু এন্টারপ্রাইজ রাত ১১ টার সময় গাইবান্ধার তুলসীঘাট নামক স্থানে পৌঁছলে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় নিমিষের মধ্যেই ভস্মিভূত হয়ে যায় কোচটি। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় সৈয়দ আলী (৪২), হালিমা বেওয়া (৪৬), সুমন মিয়া (২২), শিল্পী রানী (১০), সুজন (১১)। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সোনাভান (৪৫), সাজু মিয়া (২১)।
নিহত সৈয়দ আলী কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের কালির খামার গ্রামের দুলা মিয়ার ছেলে। স্ত্রী, ২ মেয়ে ১ ছেলে, মাকে নিয়ে ছিল সৈয়দ আলীর সংসার। রিক্সা চালানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা যাচ্ছিল সৈয়দ আলী। চন্ডিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম সীচা গ্রামের শাহাব উদ্দিনের স্ত্রী হালিমা বেওয়া নাতিকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন বুয়ার কাজ করার জন্য। ১ ছেলে ১ মেয়ে হালিমা বেওয়ার। ছেলে-মেয়েদের অভাব অনটনের সংসারে দু’মুঠো অন্নের যোগান না হওয়ায় দীর্ঘ দিন থেকে ঢাকায় বুয়ার কাজ করে আসছিলেন হালিমা। চন্ডিপুর ইউনিয়নের প্রাক্তন মেম্বার শাহজাহান মিয়ার বড় ছেলে সুমন। রং মিস্ত্রির কাজ করত সে। ছোট ভাই সুজন রাগ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তাকে খোঁজার জন্য চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন সুমন মিয়া। ভাইকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ২ ভাই ১ বোন, বাবা-মা নিয়ে ছিল সুমনের সংসার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সুমন। চন্ডিপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের বলরাম চন্দ্রের শিশু কন্যা শিল্পী রানী। ঢাকার নারায়ণগঞ্জে আলু ক্ষেতে কাজ করার জন্য মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় যাচ্ছিল শিল্পী। কিন্তু ঢাকায় যাওয়া হল না তার লাশ হয়ে ফিরতে হল বাড়িতে।
১ ভাই ২ বোনের মধ্যে শিল্পী ছিল সবার ছোট। চন্ডিপুর ইউনিয়নের ফারাজিপাড়া গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে সুজন, কন্যা তানজিনা ও স্ত্রী সোনাভানকে নিয়ে কর্মের সন্ধানে যাচ্ছিল ঢাকায়। পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে ঘটনা স্থলেই মারা যায় সুজন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সোনাভান। সীচা গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে সাজু মিয়া কর্মের সন্ধানে যাচ্ছিল ঢাকা। পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে অবশেষে হাসপাতালে মারা যায় সাজু। সংসারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি সৈয়দ আলীকে হারিয়ে তার স্ত্রী এখন অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করছে। বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ছেলে-মেয়েদের পড়া-লেখা। স্ত্রী ছেলেকে হারিয়ে একাকিত্ব জীবন যাপন করছে তারা মিয়া। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া শিশু কন্যা তানজিনাকে নিয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন তারা মিয়া। শিশু কন্যা শিল্পীকে হারিয়ে এখনো কাঁদছেন বলরাম ও তার স্ত্রী। কর্মক্ষম ছেলে সুমনকে হারিয়ে পিতা শাহজাহান মিয়া এখন সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। সব মিলে নিহতের পরিবাররা খুব বেশি ভালো নেই।
কঞ্চিবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার আলম জানান, আমি পেট্রোল বোমায় নিহত সৈয়দ আলীর স্ত্রীকে একটি বিধবা কার্ড করে দিয়েছি। এছাড়া মাঝে মাঝে পরিবারটির খোঁজ খবর রাখছি।
চন্ডিপুর ইউপি রাশেদুল ইসলাম জানান, পেট্রোল বোমায় নিহত পরিবারদেরকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল হতে যে অর্থ প্রদান করা হয়েছে, তা দিয়ে চলছে তাদের সংসার। কিন্তু পরিবার গুলো দাবি করেছেন বর্তমান তাদের সংসার ভালো চলছে না।