প্রচলিত আছে- ‘গ্রাম দেখলে কলম, আর বিল দেখলে চলন।’ ‘শস্য ভাণ্ডার’ খ্যাত সেই চলনবিলে এবার বৈরী আবহাওয়া আর তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বোরো ধান পচে নষ্ট হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তন না হওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল। শৈত্যপ্রবাহে থমকে দাঁড়িয়েছে বোরো চাষ। তীব্র শীতে একদিকে যেমন বোরো ধানের বীজ তলা নষ্ট হওয়ায় চারা সংকট দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে পড়েছে শ্রমিক সংকট। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চলনবিলের হাজার হাজার কৃষক।
সিংড়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর চলনবিলের শুধুমাত্র সিংড়াতেই ৩৭ হাজার হেক্টর বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে এখন পর্যন্ত মাত্র ছয় হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপন করা সম্ভব হয়েছে। চলমান শৈত্যপ্রবাহে বোরো ধানের চারা গাছ মরে যাচ্ছে। তাছাড়া দিনমজুররা মাঠে নামতে পারছে না। তাই নির্দিষ্ট সময়ে বোরো ধান রোপনে দিন দিন ভাটা পড়ছে।
শনিবার চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ মৌসুমে মাঠে মাঠে বোরো চাষে কৃষকদের ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও তীব্র শীতের কারণে আগুন জালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে অনেক কৃষাণ-কৃষাণী। মাঠে কৃষকদের বোরো রোপনে দেখা যাচ্ছে খুবই কম। ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা শুকিয়ে লালচে আকার ধারণ করেছে।
এব্যাপারে কান্তনগর গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তীব্র শীতে তার ৭বিঘা জমির ধান পচে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাকে আবার নতুন করে ধান রোপন করতে হচ্ছে। এতে করে তাকে আবার হালচাষ, চারা কেনা ও কৃষাণের খরচ বাবদ প্রতিবিঘা বাড়তি তিন হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে।
অপর কৃষক রইচ উদ্দিন বলেন, তিনি ডিগ্রি পাস করে তার সংসারে হাল ধরেছেন। এবছর তিনি ১৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করেছেন। কিন্তু তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় তার জমির সম্পূর্ণ ধান মরে গেছে। এখন এই জমিতে নতুন করে চাষাবাদ ও বোরো ধান রোপনে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি তার সংসার চালানে নিয়েই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কথা হয় পেট্রোবাংলা পয়েন্টে চা স্টলে আরেক কৃষক আব্দুল লতিফের সাথে, কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহে তার ১৫ বিঘা জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি দুঃচিন্তায় রয়েছেন নতুন করে আবার ধান রোপন করতে পারবেন কিনা? তাছাড়া শৈত্যপ্রবাহ কমার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। দিন দিন শীতের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় তার মতো অনেক কৃষক শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে তিনি জানান।
এবিষয়ে চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, এবছর তীব্র শীতে কৃষকের লাগানো ধান ও বীজ তলা পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চলনবিলের কৃষিতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তাছাড়া শৈত্যপ্রবাহে চলনবিলের অতিথি পাখিদের জীবন যাত্রাও দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।
সিংড়া উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত সিংড়া উপজেলায় মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপন করা সম্ভব হয়েছে। তীব্র শীতের কারণে অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তাই কৃষকদের একটু দেরিতে ধান রোপনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বীজতলা রাতে ডেকে রাখাসহ রোপনকৃত ধানে প্রতিদিন গরম পানি দিতেও কৃষককে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে আগামী দু-একদিনের মধ্যে ঘন কুয়াশা না কমলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তিনি।