মিয়ানমারের সহিংসপূর্ণ রাখাইন রাজ্য সফরে যেতে চেয়েছিলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু মিয়ানমার জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদের রাখাইন সফরের জন্য এটা সঠিক সময় নয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত কুয়েতের রাষ্ট্রদূত মানসুর আয়াদ আল-ওতাইবি বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ কথা জানিয়েছেন। তবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবিত সফর বাতিল করে দেয়নি নেপিদো।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর অভিযান শুরুর পর সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এই অভিযানে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র একে জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলে আখ্যা দিয়েছে। যদিও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ নাকচ করে আসছে।
আল-ওতাইবি বলেন, চলতি ফেব্রুয়ারিতে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব করবে কুয়েত। তাই এ মাসেই মিয়ানমার সফরের জন্য কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু এ মাসে সফরটি হচ্ছে না। আগামী মার্চ কিংবা এপ্রিলে পরিষদের অন্য সদস্য দেশ এ সফরের আয়োজন করতে পারে। মিয়ানমার সফরের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেনি। তারা বলেছে, সফরের জন্য এখন উপযুক্ত সময় নয়। তিনি বলেন, মিয়ানমার এখন দেশটিতে দায়িত্বরত বিদেশি কূটনীতিকদের রাখাইন রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে। তারা বলেছে, রাখাইনে এখন চরম উত্তেজনা চলছে। এখন সফর না করার ক্ষেত্রে এটাই কারণ দেখিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
গত বছর নভেম্বরেই ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ রাখাইন পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মিয়ানমার সরকারকে অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগ না করার আহ্বান জানিয়েছিল। নিরাপত্তা পরিষদের এক বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকারকে সাংবাদিকদের নিরাপদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
রাখাইনে গণকবরের সন্ধানে জাতিসংঘ
ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ
রাখাইনে নতুন পাঁচটি গণকবরের সন্ধান পাওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফানে ডুজারিক বলেন, মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) অনুসন্ধানে নতুন পাঁচটি গণকবর পাওয়ার খবর প্রমাণ করে রাখাইনে জাতিসংঘের প্রবেশের অনুমতি জরুরি।
এই খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে সহযোগিতাই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রকৃতপক্ষে সেখানে কী ঘটেছে তা বিশ্বের জানা উচিত। বার্তা সংস্থা এপি’র খবরে বলা হয়, এসব গণকবরে চারশোর বেশি লাশ পুঁতে রাখা হয়েছে।
রাখাইনে গণহত্যার চিহ্ন :দাবি জাতিসংঘ দূতের
মিয়ানমারের মানবাধিকার-বিষয়ক জাতিসংঘ দূত ইয়াংহি লি বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত সেনা অভিযানে গণহত্যার চিহ্ন স্পষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখার পর বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ইয়াংহি লি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে জাতিগত স্বীকৃতি এবং নাগরিকত্ব নিশ্চিত ব্যাপারটি মূল বিবেচনায় রাখা উচিত।
সম্প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ইয়াংহি লি’কে মিয়ানমারের প্রবেশ করতে দেয়নি সেদেশের কর্তৃপক্ষ। এরপর তিনি ১৮ জানুয়ারি থেকে এক সপ্তাহের জন্য রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে আসেন। থাইল্যান্ডও সফর করেছেন তিনি। দুই দেশ সফর শেষে ইয়াংহি লি বলেন, বিশ্বাসযোগ্য কোনো আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত তিনি গণহত্যার ব্যাপারে সরাসরি কোনো ঘোষণা দিতে পারেন না। তবে তিনি বলেন, আমরা এ ধরনের আলামত দেখছি এবং ধীরে ধীরে তা জোরালো হচ্ছে।