বগুড়ার ধুনট উপজেলায় প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পাঁচ আঙুলের ছাপ দিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা তাদের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের প্রায় ২৫ হাজার সিমকার্ড নিবন্ধন করে নিয়েছে। থানা পুলিশ এই প্রতারক চক্রের দুই নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হিজুলী গ্রামের জমিলা খাতুন ও শৈলমারি গ্রামের ফরিদা খাতুন প্রায় তিনমাস ধরে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছেন। উপজেলার শ্যামগাতি, পিরহাটি, সাগাটিয়া, রুদ্রবাড়িয়া ও হিজুলী গ্রামসহ আশেপাশের এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। জমিলা ও ফরিদাসহ তাদের লোকজন এলাকার সহজ সরল দরিদ্র মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের (ভোটার আইডি কার্ড) ফটোকপিসহ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পাঁচ আঙুলের ছাপ নিয়েছে।
প্রতারণার শিকার হয়েছেন মথুরাপুর ইউনিয়নের সাগাটিয়া গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন। তিনি নিজের নামে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড নিবন্ধন করতে স্থানীয় এক দোকানে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে পাঁচটি সিমকার্ড নিবন্ধন করা হয়ে গেছে। এ বিষয়টি জানাজানি হলে জমিলা খাতুনের কাছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ দেওয়া গ্রামের মানুষের টনক নড়ে। এলাকাবাসী ২২ জানুয়ারি প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেন। ইউএনও এই বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানা পুলিশকে দায়িত্ব দেন। থানা পুলিশ ২৪ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের দুই সদস্য জমিলা ও ফরিদাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
উপজেলার সাগাটিয়া গ্রামের লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমাকে বিনামূল্যে বন্ধু চুলা দেওয়ার কথা বলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ পাঁচ আঙুলের ছাপ নিয়েছে জমিলা খাতুন। পরে দেখি আমার নামে পাঁচটি সিমকার্ড নিবন্ধন করা হয়েছে। পিরহাটি গ্রামের গোলাপি খাতুন বলেন, ভিজিডি কার্ড দেওয়ার কথা বলে আইডি কার্ডের ফটোকপিসহ আঙুলের ছাপ নিয়ে আমার নামে পাঁচটি সিমকার্ড নিবন্ধন করেছে। এখন বুঝতে পারছি আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। এ বিষয়টি নিয়ে আমি মহাবিপদের মধ্যে আছি। একই পদ্ধতিতে কাউকে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড, আবার কাউকে বিনামূল্যে সেলাই মেশিন, নলকূপসহ সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলে এলাকার সহজ সরল মানুষকে ফাঁদে ফেলে এই কাজটি করেছে জমিলা, ফরিদা ও তাদের লোকজন। জানা গেছে, জমিলা ও ফরিদা শুধুমাত্র আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করতেন, সিম নিবন্ধনের আনুষঙ্গিক কাজ সম্পাদনে যে বড় একটি চক্র জড়িত অনুমান করা গেলেও চক্রের অপর সদস্যদের শনাক্ত করা যায়নি।
উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ সেলিম বলেন, অত্র ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের কাছ থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ নিয়ে প্রায় ২৫ হাজার সিমকার্ড নিবন্ধন করেছে জমিলা খাতুন ও তার লোকজন। সংঘবদ্ধ এই প্রতারক চক্রের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ গ্রামের সহজ সরল মানুষকে বিপদের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
ধুনট থানার অফিসার ইনাচর্জ (তদন্ত) ফারুকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জমিলা ও ফরিদা খাতুনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া এলাকার যে সকল মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাদের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।