‘মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি একমুখী হওয়া উচিত। যদি একমুখী না হয় তখন তা অর্থনীতির জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়’ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) সাবেক গভর্নর ড. চক্রবর্তী রঙ্গরাজন।।
রবিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে রাজধানীর বিআইবিএম অডিটরিয়ামে একক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) রাজধানীর মিরপুরে তাদের কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
এ সময় বিআইবিএম’র মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. চক্রবর্তী রঙ্গরাজন বলেন, অর্থনীতিকে সূচারুরূপে কার্যকরী রাখার জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে গভীর সংলাপ ও সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।
আর্থিক অবকাঠামো নিয়ে ড. চক্রবর্তী রঙ্গরাজন বলেন, যথোপযুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান তৈরিতে এবং আর্থিক অবকাঠামোর বিস্তৃতকরণের ক্ষেত্রে উন্নয়শীল দেশসমূহের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসমূহের একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাসমূহ এবং ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছানোর ব্যাপারে আর্থিক ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্থিক অন্তর্ভূক্তির ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করছে। ভারত, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং এটা চালু রাখা প্রয়োজন।
মুদ্রানীতির বড় সুবিধা হলো এটা যে কোনো পরিবর্তনে দ্রুত সাড়া দেয়। ক্রেডিট ও অর্থের মূল্য এবং প্রাপ্তিতে পরিবর্তন এনে মুদ্রানীতি অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে এ প্রভাব নগণ্যও হতে পারে। ১৯৩০ সালের মহামন্দার সময় তারল্য ফাঁদের কারণে মুদ্রানীতির প্রভাব ছিল না বললেই চলে। ২০০৮ সালে আর্থিক সংকটের পর উন্নত বিশ্বে সুদহার শূণ্যের কোটায় পৌঁছায় এবং এর ফলে মুদ্রানীতি আবার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে দুর্বল বলে প্রতীয়মান হয়।
ড. রঙ্গরাজন প্রশ্ন তোলেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা নিয়ে। তিনি লক্ষ্য অর্জনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথেষ্ট ইনস্ট্রুমেন্টস আছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, যখন অতিরিক্ত চাহিদা হতে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয় তখন এ মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতাকে মেনে থাকে। তবে যখন সরবরাহ সংকট থেকে এ মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হয়, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা সম্পর্কে কিছু সন্দেহের জন্ম দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের মত দেশসমূহ যেখানে কৃষিজ উৎপাদন অনেকটা প্রকৃতির খামখেয়ালির উপর নির্ভরশীল সেখানে এ জাতীয় সরবরাহ সংকট অহরহ দেখা যায়। যখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়, তখন মূদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি যৌথভাবে ভূমিকা রাখতে হয়। যখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ হয় এবং এটা যখন মূল্যস্ফীতির গ্রহণযোগ্য মাত্রা অতিক্রম করে তখন মুদ্রানীতিকে অবশ্য এভাবে পরিচালনা করতে হবে যাতে করে আর্থিক সম্পদের রিটার্ন প্রকৃত পক্ষে ধনাত্বক হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ড. চক্রবর্তী বলেন, প্রায় সমস্ত দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তবে অধিকাংশ সরকারই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামতকে গুরুত্ব দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো যুক্তি হলো আর্থিক স্থিতিশীলতা যা কিনা আধুনিক দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য অত্যাবশ্যক, সেটা কেবল কিছু দক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী মুদ্রানীতি তৈরি ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্ভব।
ড. চক্রবর্তী রঙ্গরাজন রবিবার তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। তিনি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ১৯তম গভর্নর ছিলেন। ১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৭ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত আরবিআইর গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং রাজ্যসভার সদস্যও ছিলেন।