শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে শীতলক্ষ্যার দূষিত ও পঁচা পানিতে ভেসে উঠছে মরা মাছ। অপরদিকে বিষের প্রভাবে নদীর মাছগুলো আক্রান্ত হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে মাছ ধরার হিড়িক পড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শীতলক্ষ্যায় এ মাছ ধরতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুশুরী, জাঙ্গীর, ইছাখালী, পিতলগঞ্জ, কাঞ্চন, মুড়াপাড়া, শিমুলিয়া, বেলদী, দেবইসহ ১৬ গ্রামের লোক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঘরের মশারী, খেয়াজাল ও পলো নিয়ে নদীতে নেমে এসব বিষাক্ত মাছ ধরতে পরিবারের শিশু, কিশোর বৃদ্ধসহ নারীরাও নেমেছেন নদীতে।
শুধু তাই নয়, মাছ ব্যবসায়ী ও জেলে সম্প্রদায় এ মাছগুলো নিয়ে যাচ্ছে হাটবাজারে। আর সহজেই ধরতে পাওয়া পঁচাপানির প্রভাবে আক্রান্ত মাছগুলো ধরতে নদীর বুকে এক উৎসব আমেজ দেখা গেছে। তবে এ বিষাক্ত মাছ না খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, শিল্পনগরী খ্যাত রূপগঞ্জের অভ্যন্তরীণে প্রভাহিত শীতলক্ষ্যা পাড়ে বেশকিছু শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেই ইটিপি প্ল্যান না বসানোর কারণে প্রকাশ্যে বর্জ্য ফেলে দূষিত করছে এ নদীর পানি। কিছু প্রতিষ্ঠানের ইটিপি প্ল্যান থাকলেও রাতের আধারে বর্জ্যগুলো সরাসরি ফেলছে নদীতে। অন্যদিকে রাজধানী শহরের কোলঘেষা বালু নদী দিয়ে প্রবাহিত বিষাক্ত বর্জ্যগুলো ডেমরা মোহনা দিয়ে শীতলক্ষ্যায় প্রবেশ করায় ক্রমেই পঁচা পানিতে রূপ নিয়েছে। আর তাতে গোসলসহ ব্যবহার অনুপযোগী এ পঁচা পানি একদিকে জনজীবনে বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এ অঞ্চলের বাসিন্দা। একই কারণে নদীর চাপিলা, রুই, পাঙ্গাস, শশুক, চিংড়ি, বোয়াল ও শোলমাছসহ শতাধিক প্রজাতির মাছগুলো কোথাও মরে ভেসে ওঠছে।
আবার কারখানার বর্জ্যের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মাছগুলো শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পেরে তীরে চলে আসছে। এ সময় স্থানীয়রা বিভিন্ন প্রকার সরঞ্জাম ব্যবহার করে এসব মাছ ধরে পরিজন নিয়ে ভোজন করছে। এতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করেন রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের প্রভাবে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় ফলে মাছ শ্বাস নিতে না পারায় তীরে ভীড় করে। একসময় এ মাছ মরে ভেসে ওঠে। এসব মাছ খেলে পেটের পীড়াসহ নানাবিধ পানিবাহিত রোগবালাই বাড়তে থাকে।দীর্ঘদিন এ মাছ খেলে ক্যান্সারসহ মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তাই এসব মাছ না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার বসাক বলেন, ‘মাছগুলো কি কারণে ভেসে ওঠেছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে শীতলক্ষ্যার পানিতে প্রচুর বর্জ্য রয়েছে। ফলে এখানে মাছের আবাসস্থল নিরাপদ নয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কারখানাগুলোতে ইটিপি পদ্ধতি ব্যবহারের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ইটিপি ব্যবহার করছেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে