রাত পোহালেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী দেবীর পূজা। আর এ পূজাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে জোর প্রস্তুতি। সরস্বতী দেবীর মন জয় করতে শিক্ষার্থীদের কোনো অংশে কমতি নেই। প্রতি বছরের মতো এবারও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে সরস্বতী পূজা পালনের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।
রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা পূজা মণ্ডপ তৈরি ও অন্যান্য প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সনাতন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মুসলিম শিক্ষার্থীরাও সরস্বতীকে বরণ করতে কাজ করছেন সমানভাবে। দেখে মনে হয় সরস্বতী পূজা এখন অসাম্প্রদায়িক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
সনাতন শাস্ত্র মতে সরস্বতী হলেন জ্ঞান, বিদ্যা, সংস্কৃতি ও শুদ্ধতার দেবী। সৌম্যাবয়ব, শুভ্র বসন, বীণা ধারিণী এই দেবী বাঙালির মানসলোকে এমন এক প্রতিমূর্তিতে বিরাজিত, যেখানে কোনো অন্ধকার নেই, নেই অজ্ঞতা বা কুসংস্কারের কালো ছায়া। কিন্তু এ পূজা এখন শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা এখন একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসবে পরিণত হয়েছে। আর এ উৎসব সনাতন ও মুসলিম উভয় ধর্মাবলম্বী মানুষ সমানভাবে উপভোগ করছে। সনাতন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম শিক্ষার্থীরাও এই পূজা আয়োজনের মাধ্যমে বিদ্যাদেবীকে সন্তুষ্ট করে শিক্ষা অর্জনের পথ সুগম করতে ব্যস্ত।
পূজা আয়োজক কমিটির সভাপতি ড. প্রিয়ব্রত পাল জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের অর্থায়নে প্রতি বছরের মতো এবারও জাকঁজমকভাবে সরস্বতী পূজা পালন করা হবে। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় মোট ৩৩টি পূজা মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগে থাকবে পৃথক পৃথক পূজা মণ্ডপ। মণ্ডপগুলো নিজ নিজ বিভাগের সামনে সাজানো হবে। তাছাড়া পূজা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় একটি সার্বজনীন স্থান তাই এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর এ পূজায় সব শিক্ষার্থীই অংশগ্রহণ করে থাকে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ না করার শিক্ষা দেয় পূজা।
পূজায় আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, পূজা উপলক্ষে দেশের সব স্থানেই সরকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক পূজা পালন হওয়ায় এখানে পূজা মণ্ডপ অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি। তাই পূজা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টারিয়াল বডিও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে।