ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই আচরণ বিধি লংঘন করে আগাম প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের তত্পরতা চোখে পড়ার মতো। নির্বাচন কমিশন থেকে আগাম প্রচারণা বন্ধে বার বার তাগাদা দেয়া হলেও তা অনেকেই আমলে নিচ্ছেন না।
রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের বাড়ির সীমানা দেয়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ফ্লাইওভারের খুঁটি, গণপরিবহনে নির্বাচনী পোস্টার দেখা গেছে। যদিও নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের আগে এ ধরনের পোস্টার সাটানোর ওপর বিধি নিষেধ রয়েছে। এদিকে আচরণ বিধি তদারকিতে ১৮জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হলেও তারা রবিবার পর্যন্ত মাঠে নামেননি। রবিবার নির্বাচন কমিশনের ইটিআই ভবনে ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করে ইসি। তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রমুখ। সোমবার মেজিস্ট্রেটরা মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন এমন কোনো খবর আমরা পাইনি। আশা করি নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত সব প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে চলবেন। তা না হলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে কেউ প্রচার চালাতে পারবেন না। নিয়ম ভঙ্গ করে কেউ প্রচারণা চালালে আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি কেউ আচরণবিধি লংঘন করছে কি না তা মনিটরিংয়ে টিম থাকবে বলেও জানান তিনি।
ডিএনসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী প্রচারণা চালিয়েছেন। শনিবার রাজধানীর গুলশান এলাকায় প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে আদম তামিজি হককে। ফেসবুকে ওই প্রচারণার ভিডিও আপলোড করেছেন তার সমর্থকেরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাড্ডা ও শাহজাদপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন এক ব্যবসায়ী নেতা। বুধবার তিনি মিরপুর শাহ আলীর মাজারে একটি জনসভায় বক্তব্য দেন। অনেকটা কৌশলে গণসংযোগ করছেন গত নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তাবিথ আউয়াল। গত বুধবার কাওরানবাজার এলাকায় গণসংযোগ চালান তিনি। বৃহস্পতিবার কাওরানবাজার এলাকায় গণসংযোগ ও কর্মীসভা করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী।
এদিকে মেয়র প্রার্থীদের এসব প্রচারণার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ইসি। অন্যদিকে গত ৬ জানুয়ারির মধ্যে আগাম নির্বাচনী প্রচারণা সামগ্রী অপসারণের জন্য ইসি নির্দেশনা দিলেও ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকা মোহাম্মদপুর, মিরপুর-১০, উত্তরা, কুড়িল বিশ্বরোড, কাওরানবাজার ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন এলাকা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এরমধ্যে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর, কারওয়ান বাজার এলাকা, তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টারও দেখা গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গণপরিবহনের গায়ে পোস্টার সাটানো আছে।
আগাম প্রচারণার বিষয়ে সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর ধারা ৫ এ বলা হয়েছে, কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের পূর্বে কোন ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। অন্য এক ধারায় বলা হয়েছে, আচরণ বিধি লংঘনের দায়ে মোবাইল কোর্ট যেকোনো ব্যক্তিকে অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবে। আর কোনো রাজনৈতিক দল বা সংস্থা আচরণ বিধি লংঘন করলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
প্রসঙ্গত: তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৯ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ৩০ জানুয়ারি এবং ভোটগ্রহণ করা হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি।