ডেস্ক রিপোর্ট: রপ্তানি আয়ে কাঙ্ক্ষিত গতি আসছে না। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসেও রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সবমিলিয়ে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম সাত মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে সাড়ে ছয় শতাংশ বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। তবে গত দুই মাসে রপ্তানি আয় এর চাইতেও কম হারে হয়েছে।
সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। একই সময়ে সাড়ে তিনশ’ কোটি মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৩২৯ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চাইতে রপ্তানি কমেছে প্রায় আড়াই শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানের এসব তথ্য জানা গেছে।
অবশ্য, গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ের রপ্তানি পরিস্থিতিও খুব ভালো ছিলনা। সে সময় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যদিও ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ইপিবি প্রকাশিত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলোচ্য সাত মাসে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ১৩২ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা। এ আয় লক্ষ্যমাত্রা থেকে শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ কম। এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ১৩৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কম হয়েছে ৫ কোটি ডলার বা ৪০০ কোটি টাকা।
রপ্তানির প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক খাত। এ খাত থেকেই আসে মোট রপ্তানি প্রায় ৮২ শতাংশ। ফলে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় সার্বিক রপ্তানির উপর প্রভাব ফেলে। গত সাত মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ১ হাজার ৭৬৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৩২ লাখ ডলারের। অর্থাৎ রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, কারখানা সংস্কারের ইতিবাচক বার্তা বিশ্বব্যাপী প্রচার হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের আস্থা তৈরি হওয়ার কথা। সেই বিবেচনায় রপ্তানি আরো বাড়ার কথা। কিন্তু এখনো বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা চলছে। এসব কারণে পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অবশ্য অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের পোশাক রপ্তানির চিত্রও একই। ভিয়েতনামসহ আরো কিছু দেশ কেবল ব্যতিক্রম। ক্রেতার ভোগ ব্যয় কাঙ্ক্ষিত হারে না বাড়াকে এর পেছনে দায়ী করা হচ্ছে। তবে আগামী দিনগুলোতে চাহিদা বাড়লে বাংলাদেশের রপ্তানিও বাড়তে পারে।
ইপিবি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তৈরি পোশাক ছাড়াও রপ্তানি তালিকার বড় পণ্যের মধ্যে হিমায়িত এবং অন্যান্য মাছ জাতীয় পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৮ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় বেশি হয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। কৃষি পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ। তবে চামড়া ও চামড়াপণ্যের রপ্তানি কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে ৩১ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কম হয়েছে ৬১ শতাংশ। এর বাইরে আরো বেশকিছু পণ্যের রপ্তানি কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়েনি। এমনকি বেশিরভাগ পণ্যেই রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।