গত বছরের আগস্ট মাসের বন্যায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড় গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের একটি মূল বাঁধ প্রবল পানির চাপে ভেঙে যাওয়ার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার ফলে হুমকির মুখে পড়ে গাইবান্ধা-সাঘাটা প্রধান সড়ক।
মেরামত না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে বাঁধের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে হাজার-হাজার একর জমির ফসল, বসত-বাড়ি ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই অতিদ্রুত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় এই বাঁধটি মেরামত করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী গ্রাম থেকে দক্ষিণ দিকে সাবেক ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ৩০ বছর আগে প্রথমবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আবারও দুইবার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পরে সেই বাঁধ দুটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আর ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি
প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পেলেই কাতলামারি, ভাঙ্গামোড়, সানকিভাঙ্গা ও নীলকুঠিসহ আশেপাশের আরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হলে হাজার হাজার একর জমির ফসল, বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় মানুষের। আর হুমকির মুখে পড়ে গাইবান্ধা-সাঘাটা প্রধান সড়ক।
এমতাবস্থায় কাতলামারী গ্রাম থেকে দক্ষিণ দিকে সানকিভাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত মানুষ স্বেচ্ছায় জমি ও মাটি দেয়ায় প্রায় দুই কিলোমিটার বাঁধ তৈরি করে দেয় একটি বেসরকারি সংস্থাঅপরদিকে সানকিভাঙ্গা গ্রাম থেকে সাবেক ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত নীলকুঠি-ভাঙ্গামোড় পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি সংগঠন বাঁধ নির্মাণ করে। ফলে বর্ষাকালে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও বন্যার ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়নি ওইসব গ্রামের তিন সহস্রাধিকেরও বেশি পরিবার।
বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীর বাঁধ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ওইসব গ্রামের মানুষের কাছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি লোকালয়ে ঢুকতে না পারায় আর মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয় না। কিন্তু গত বছরের আগস্ট মাসের বন্যায় কাতলামারী থেকে সানকিভাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত নতুন এই বাঁধটির ভাঙ্গামোড় গ্রামে প্রবল পানির চাপে ২০০ মিটারেরও বেশি অংশ ভেঙে গিয়ে মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়ক হুমকির মুখে পড়ে ও এক সপ্তাহেরও বেশি সময় এই সড়কে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় মানুষ বিকল্প পথে চলাচল করে ভোগান্তির শিকার হয়। তাই আবারও নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ফসলি জমি, বসতবাড়িসহ রাস্তা-ঘাট পানিতে প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হুমকির মুখে পড়তে পারে গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়ক। আর তাই বর্ষা মৌসুম আসার আগেই বাঁধটি মেরামত করা জরুরি।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে দেখা গেছে, কাতলামারী গ্রাম থেকে দক্ষিণে সানকিভাঙ্গার দিকে একটি বাঁধ গেছে। যেটি দিয়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক মানুষ চলাচল করে। আর বাঁধটির দুইপাশেই রয়েছে ইউক্যালিপটাস গাছ। এই বাঁধটিও পুরোটি মাটি দিয়ে মেরামত করা প্রয়োজন।
কাতলামারী গ্রামের রাশেদ মিয়া বলেন, ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধের অংশ এখন শুষ্ক মৌসুমে মেরামত না করলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে আমাদের। তাই দ্রুত বাঁধটি মেরামত করা প্রয়োজন।
গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম সরকার বলেন, এই এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের মূল বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আর বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। পরে একটি বেসরকারি সংস্থা বাঁধ নির্মাণ করলে আমাদের অনেক উপকার হয়। গত বছরের বন্যায় ভাঙ্গামোড় গ্রামের এই বাঁধ ভেঙে গেলে আমার ইউনিয়নেরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। বাঁধটি মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা যেহেতু ওই বাঁধটি নির্মাণ করিনি, তাই সেটি মেরামতও করতে পারছি না। উপর মহল থেকে যদি পাস হয়ে আসে তাহলে সেটি মেরামত করা হবে।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার ঘোষ মুঠোফোনে বলেন, ওই এলাকাটি আমি পরিদর্শন করেছি। আগামী মার্চ মাসে ২য় পর্যায়ের ৪০ দিনের মাটি কাটার কর্মসূচিতে ওই বাঁধটি মেরামত করা হবে।