রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট না দিয়ে নৌকা প্রতীকে সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজশাহী অঞ্চলের ভয়াবহ পরিস্থিতিও তুলে ধরেছেন তিনি।
বিএনপিকে ভোট দিলে তাদের নির্বাচিতরা কাজ করতে পারে না বলেও উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী প্রথমে নাটোরের কাদেরাবাদ সেনানিবাসে গিয়ে কাদিরাবাদ সেনানিবাসে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স ষষ্ঠ কোর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখান থেকে তিনি যান রাজশাহীতে।
বেলা তিনটায় মাদ্রাসা ময়দানে জনসভা শুরু হয়। এই সমাবেশকে সামনে রেখে গত কয়েকদিন ধরেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল রাজশাহী আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সমাবেশ স্থলে আসার আগেই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মানুষের ভিড় আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
মাদ্রাসা ময়দানে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী ৩৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রাজশাহীর উন্নয়নে নানা উদ্যোগ এবং প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন তিনি।
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের আমলে নগরে উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের আমলের সঙ্গে তুলনা করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত টাকাই দিই না কেন এরা উন্নয়ন করতে পারে না। কারণ এদের মন থাকে লুটপাটের দিকে। এদের মাথায় পচন।’
‘এদের নেতাই (খালেদা জিয়া) যদি এতিমের টাকা মেরে খায়, তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা কী খেতে পারে? আপনারাই বিচার করে দেখেন। আপনারাই ভেবে দেখুন।’
বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাজশাহীতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এই বাংলা ভাইয়ের হাতে আব্দুল কাইয়ুম বাদশাকে মেরে গাছে সাথে উল্টো ঝুলিয়ে রেখেছিল। বিএনপি-জামায়াত আমলে এই এলাকা ছিলো সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাইদের অভয়ারণ্য। এখানে মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারত না, নিরাপদে চলতে পারত না। এই রকম একটি অবস্থা তারা সৃষ্টি করেছিলো সারা দেশব্যাপী। উন্নয়ন পায়নি মানুষ, পেয়েছে বোমাবাজি। এভাবে মানুষের মাঝে আতঙ্ক।’
আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা, পেট্রল বোমা হামলার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে, তারা দেশের জন্য কী কল্যাণ করতে পারে?’
‘আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করি। সেখানে তারা মানুষের সম্পদ লুটে খায়। তারা বিদ্যুৎ দিতে পারে নাই, দিয়েছিল কি?’ ‘খালেদা জিয়ার ছেলে খাম্বার ব্যবসা করত, সবাইকে খাম্বা কিনে দিয়েছে। রাস্তার পাশে শুধু খাম্বা শুয়ে আছে, বিদ্যুৎ নাই।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, বিদেশ থেকে আসা টাকায় এতিমখানাটা কোথায় করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর আগে তিনি কিছু রেখে না যেতে পারলেও এখন জিয়া পরিবারের শত শত কোটি টাকার উৎস কোথায় সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। জানান, খালেদা জিয়ার দুই ছেলে ব্যাংক থেকে ৯০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়ে মেরে দিয়েছে।
এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ দেশের কী কী করেছে তারও বর্ণনা দেন শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়ন প্রকল্প বর্ণনা করা ছাড়াও পাকিস্তান আমলের কাহিনি তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘নৌকা আপনাদের মার্কা, নৌকা জনগণের মার্কা। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের থাকতে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের যে সংবিধান হয়েছিলো সেখানে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দিয়েছিল।’
‘এই দেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলো বলেই স্বাধীনতা পেয়েছে। স্বাধীনতা পেয়েছে বলেই আজকে উন্নয়ন হচ্ছে।’
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করে তার কন্যা বলেন, ‘আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, আমরা এখানে দিতে এসেছি। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে এসেছি।’
সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মার্কাটা কী? মার্কাটা হচ্ছে নৌকা। সেই নৌকা মার্কায় আমি আপনাদের কাছে ভোট চাই।’
‘যেভাবে উন্নয়ন করে যাচ্ছি, সেই উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে। মানুষ যেন খেয়ে-পড়ে সুখে থাকে, শান্তিতে থাকে তার জন্য আমি আপনাদের কাছে আবেদন করি আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবার করার সুযোগ আপনারা দিন।’
গত ৩০ জানুয়ারি সিলেট এবং ৮ ফেব্রুয়ারি রবিশালের মতো রাজশাহীতেও জনসভায় উপস্থিত জনতাকে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার ওয়াদা করান শেখ হাসিনা।
বক্তব্যের শুরুতে রাজশাহীবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছি। ইতিমধ্যে আমরা কিছু প্রকল্প উদ্বোধন করেছি আর কিছু নতুন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছি।’
‘আমরা উপহার নিয়ে আসি। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ছিলো। তারা কি দিয়েছিল?’
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভা পরিচালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।