নাদিকুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টারঃ ‘মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য’ এই কথাটা যে কতটা সত্য তা আজ আবার প্রমানীত হল। রাতের আঁধারে সন্তান সম্ভবা এক পাগলি মায়ের প্রসব বেদনার গগনবিদারী চিৎকার ভারি করে তুলেছিল শিবচরের সে জনপদ। আর সেই পাগলির পাশে দাঁড়ানো কিছু যুবকদের জন্য নতুন জীবন ফিরে পেল শিশুটি। শিশুটি জন্ম নিয়েছে রাস্তার ধারে এক বালির মাঠে, সালমা নামে ঐ পাগলির গর্ভে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিবচরে হাতিরবাগানের পাশে বালুর মাঠে এক পাগলি বাচ্চা প্রসব কালে ব্যাথায় চিৎকার করলে কিছু যুবক সেখানে ছুটে যায়। তারা গিয়ে দেখেন প্রসববেদনায় চিৎকার করছেন এক পাগলি মা।
ফেসবুক সুত্রে জানা যায়, অমি, সাগর, ইব্রাহীম নামের সেই যুবকেরা কারো চিৎকার শুনতে পেয়ে সেখানে এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখে এক পাগলি ব্যাথায় কান্নাকাটি করছে আর আল্লাহ্ বাচাও বাচাও বলছে। তৎক্ষণে বাচ্চাটি প্রায় ভূমিতে এসে পড়েছে। শিশুটির নাড়ি লেগে আছে পাগলির নাড়িতে, সারা গাঁ রক্ত আর বালিতে একাকার। পাগলি মায়ের চোখ তখন সন্তানের দিকে, তার চোখে হাসিকান্না মিশ্রিত আনন্দাশ্রু।
তখন বন্ধুদের দু একজন ছুট লাগাল অদূর লোকালয়ে, ডেকে আনল কয়েকজন মহিলাকে, কারন এ যে মহিলাদের কাজ। কিন্তু পাগলি বলে কথা, মহিলাদের অনেকে এসে জড়ো হলেও কেউ শিশুটির নাড়ি কাটতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে একজন বন্ধু ডাক্তার ডাকলেন, রাতের আঁধারে এ নির্জনে এক পাগলির সেবায় প্রথমে তিনি আসতে আপত্তি জানান, এরপর চলে আসেন।
ডাঃ শহিদ আসলে অমি এবং তার বন্ধুরা পাগলি সহ বাচ্চাটির হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। খবরটা শুনার পরেই জেলা পরিষদের সদস্য আয়শা সিদ্দিকা মুন্নি, শিবচর ইউএনও এর সহধর্মিণী, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হামিদা বানু, শিবচর প্রেসক্লাবের সভাপতি একেএম নাসিরুল হক, সাংবাদিক শিব সংকর রবিদাস সহ অন্যরা হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং চিকিৎসার্থে আর্থিকভাবে সাহায্য করেন।
পাগলীটা এখন বলে, ‘এইযে আমার মেয়ে’
ফেসবুকে অমি তার অনুভুতি ঠিক এইভাবে প্রকাশ করেন, “হয়ত আমার রক্তের বন্ধন না কিন্তুু সেদিন ওদের পাওয়ার পর থেকে ওদেরকে নিজের আপন কেউ মনে হচ্ছে। ওদের দুজনের প্রতি এতটাই মায়ায় পরেছি যে আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। কারন একটা মানুষ হিসেবে অন্য একটি মানুষের প্রতি খুব সামান্য কর্তব্য পালন করতে পেরেছি। সবচেয়ে আমার পাওয়া ওর মা সালমা আপা(পাগলী মেয়েটা) আমি যখনি যাই বলে এইযে তোর মামা আইছে এবং আমাকে বলে নে ওরে নে ধর ওরে। আল্লাহ ওদের তুমি তোমার কুদরতী উছিলা দ্বার হেফাজত কর, সুস্থ রাখ এবং উপযুক্ত ভাবে বাচ্চাটা বেরে উঠুক।
অতঃপর, অমি ও তার বন্ধু লিটু রাত ২:৩৫ এ ভাবতে ভাবতে শিশুটির জন্য খুব সুন্দর একটি নাম দিলেন- ‘জান্নাতুল হাবিবা নূরে (হুমায়রা)’।
অবশেষে তিনি ফেসবুকে এটাও জানান, ‘সবাই জান্নাতুল হাবিবা নূরে (হুমায়রা) মামাটার জন্য দোয়া করবেন। (আমিন)।