পৃথিবীর সব ভাষাই আল্লাহর বিশেষ দান। যুগে যুগে প্রেরিত লক্ষাধিক নবী-রাসুল নানা ভাষায় কথা বলতেন। তবে তাদের সবার প্রয়োগ ও বৈশিষ্ট্য ছিল প্রায় একই। তাদের ভাষা ছিল সুন্দর, মার্জিত ও রুচিসম্মত। হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইসলাম হচ্ছে সুন্দর ভাষায় কথা বলা ও ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো।’ একটি মন্দ ও কর্কশ কথা অপমানজনক উক্তি মানবহৃদয়ে দীর্ঘকালীন রক্তক্ষরণ ঘটায়, যার উপশম সহজে হয় না।
আমাদের প্রিয়নবী (সা.)-এর মধুর ভাষা শুনতে, সুন্দর আচরণ দেখতে অমুসলিমরাও ভিড় করতেন। ইসলাম মূলত তলোয়ার নয় সুন্দর ভাষা ব্যবহার ও সুস্বভাবের কারণেই বিশ্বময় ব্যাপ্তি লাভ করছে।
আমরা জিহ্বার সাহায্যে কথা বলি, মনের ভাব প্রকাশ করি। জিহ্বার অপব্যবহারের জন্য আল্লাহ কিয়ামতে প্রশ্ন করবেন বলে কোরানে উল্লেখ আছে। কর্কশ ও রূঢ় কণ্ঠে কথা বলা জিহ্বার অপব্যবহার। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা ভাষায় মিষ্টভাষী হও, আচরণে সংযমি হও।’ তিনি কর্কশ ভাষী না হতে আল্লার কাছে প্রার্থনা করতেন। রাসুল (সা.) বিশুদ্ধ ভাষায় মার্জিত শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। তার কথাগুলো ছিল যেন সুগন্ধী ফুল যা দিয়ে মালা গাঁথা যেত। নবী করিম (সা.) ছিলেন স্বল্পভাষী। অল্প কথায় হাজার কথার মর্ম লুকিয়ে থাকত তার ভাষণে। প্রয়োজনীয় কথা তিনি তিনবার করে বলতেন। সদা হাসি মুখে থাকতেন।
স্থানকাল পাত্রভেদে ইসলাম কঠোর ও নরম ভাষা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি হক কথা বলো যদিও তা তিক্ত হয়। সুন্দর ভাষা জান্নাতে পৌঁছায় আর দুর্ব্যবহার দোজখে পতিত করে।’ সুন্দর চেহারা নয়, সুন্দর ব্যবহার ও সৎচরিত্র কিয়ামতে নেকির পাল্লায় ওজন বাড়াবে। ভাষাগত ত্রুটি সম্পর্কে নবী করিম (সা.) নিজের জিহ্বাকে স্পর্শ করে বলেন, ‘এ জিহ্বাকেই সবচেয়ে বেশি ভয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘কিয়ামতে মানুষকে উপুড় করে দোজখে ফেলা হবে ভাষাগত অসমতার কারণে (জিহ্বার কারণে)।’ ইসলামের নামে মিথ্যে বলাও ভয়াবহ অপরাধ। সুন্দর ভঙ্গিতে ভালো ও কল্যাণকর কথা বলা সদকাতুল্য। সুমিষ্ট ভাষায় কথা বললে আল্লাহর প্রতিটি কথার বিনিময়ে সওয়াব দেবেন। মানুষের একটি বাক্যও যেন অপ্রয়োজনীয় এবং মার্জিতের মাপকাঠি অতিক্রম না করে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। বিশুদ্ধ ও সুমিষ্ট ভাষা প্রকৃত মুসলমানের নিদর্শন।