এইচ আর রুবেল, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : মন্ত্রী, সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বারদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বরাদ্দ এসে থাকে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, মন্দির, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, খেলার মাঠ প্রভৃতি খাতে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এছাড়াও রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।
কিন্তু এসব বরাদ্দের প্রাপ্তি, বিতরণ বা প্রয়োগের বাস্তব চিত্র কী, এর কত ভাগ যথাস্থানে পৌঁছায় অথবা কাজে লাগে – এই প্রশ্নের উত্তর কেউ কি জানার চেষ্টা করেন? এই বরাদ্দ প্রাপ্তিধন্য জনেরা রাতারাতি আখের গুছিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠছে। অনেক বরাদ্দ নূন্যতম কাজ না করেই সুবিধাভোগীদের দ্বারা পুরোটাই লুটপাট হয়ে যায়। কবরস্থানের নামে বরাদ্দ এনে কোনো কবরে এক কোদাল মাটি না দিয়ে পুরো বরাদ্দই নিজের পেটে ঢুকিয়ে দিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু বরাদ্দভুকেরা। মন্দির মসজিদের নামে বরাদ্দ এনে নয়ছয় করে অর্ধেকের বেশি আত্মসাৎ করে অহরহ অসাধু চক্রের লাভবান হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নবগঠিত ১১নং ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের এক আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে কবরস্থানের টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হবিগঞ্জ সদর-লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ আসনের মাটি ও গণমানুষের নেতা, উন্নয়নের রূপকার, গরীব অসহায় মানুষের কান্ডারী মাননীয় সাংসদ আলহাজ্ব এডভোকেট আবু জাহির যিনি মসজিদ- মাদ্রাসা প্রেমিক। তিনি কোন মসজিদ-মাদ্রাসা, কবরস্থানের উন্নয়নের কথা শুনলেই নিজেকে স্থির রাখতে পারেন না। যে কেউ বললেই উন্নয়নের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন অনায়াসে।
একইভাবে ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের বিশাউড়া গ্রামের দক্ষিণে জাঙ্গাল নামক স্থানে পারিবারিক কবরস্থানে মাটি কাটার জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। যা কাজ করার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা বিশাউড়া গ্রামের আক্কাছ মিয়াকে কবরস্থানে মাটি কাটার দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি কবরস্থানে কোন কাজই শুরু করেনি তিনি। এক কোদাল মাটি না কেটে কবরস্থানের নামে বরাদ্দের ৫০ হাজার টাকা তুলে সম্পূর্ণ আত্মসাৎ করে।
এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে গ্রামবাসী।
সরজমিনে গিয়ে দেখাযায়, কবরস্থানে কোন মাটি নেই। পাশে থাকা একটি খাল (ছড়া) থেকে কিছু মাটি খেটে খাল (ছড়ার) উপরে রেখেছে। মাটি কাটার শ্রমীকদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, আমরা তিনজনে এক দুপুর করে তিনদিন মাটি কেটেছি। যার পারিশ্রমিক পেয়েছি ৪৫০০ টাকা।
এদিকে খাল (ছড়া) কাটার কোন অনুমতি আছে কিনা আক্কাছ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কবরস্থানে মাটি কাটার জন্য বরাদ্দ এসেছে কিন্তু খাল (ছড়া) কাটার কোন অনুমতি নেই।
সরকারি খাল (ছড়া) বা নদী থেকে মাটি কাটতে অনুমতি নেয়ার নিয়ম থাকলেও আওয়ামীলীগ নেতা আক্কাছ মিয়া সেই নিয়ম মানেনেনি।
আক্কাছ মিয়া বরাদ্দের ৫০ হাজার টাকা পেয়েও কবরস্থানে মাটি ভরাট না করায় গ্রামে বিরুপ সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এদিকে একই গ্রামের বাসিন্দা ইদন মিয়া জানান, কবরস্থানটি আমাদের বাপ-চাচার নামে। পারিবারিক কবরস্থান হিসেবে রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু আক্কাছ মিয়া কবরস্থানে মাটি ভরাট করার জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়ে এসেছে, আমরা জানি না। পরে শুনেছি, কিন্তু কবরস্থানে সে কোন মাটি কাটেনি। তিনি বলেন, যে গোরস্থানের নামে অর্থ বরাদ্দ করেছে সেখানে মায়ের কবর রয়েছে। সেখানে কাজ না করে সেই টাকা আত্মসাৎ করায় আমরা বিস্মিত হয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ কামাল হাজারী জানান, আমি শুনেছি কবরস্থানের জন্য ৫০ হাজার টাকার একটি বরাদ্দ আক্কাছ মিয়া পান। যেটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কিন্তু কবরস্থানে মাটি না দিয়ে আত্মসাৎ করাটা অন্যায়। ফর্মালিটি ম্যান্টেন করার জন্য কিছু মাটি খেটে খালের পাড়ে দেয়া হয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী আক্তার বলেন, এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে। একইসাথে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।