ঈদ আনন্দ নিরানন্দ—-মোহাম্মদ হাসানুর রহমান
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন ̈ ঈদকে ঘিরে দু’টি বড় উৎসব রয়েছে। এর একটি ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আজহা।
ঈদুল ফিতরে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় একাধারে একটি মাস সিয়াম পালনের পর মুসলমানগণ মহান আল্লাহ পাকের প্রশংসা ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দ্যেশে ̈ ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে এ খুশির দিনটি উৎযাপন করে থাকেন।
যাকাত দেওয়া, ফেতরা দেওয়া সহ মুসলমান নর-নারীদের জন্য এ ঈদকে ঘিরে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিতা ও
নানা রকম লৌকিকতা পালনের আবশ্যকতা রয়েছে। খুব সকালে উঠে নরীরা খাবার তৈরী, পরিবেশন ও বিতরণ, ঘর গোছানো এবং সাজসজ্জার মধ্য দিয়ে দিনের সূত্রপাত করেন। নতুন পোশাকে নিজেদের সাজানো, খানাপিনা, দান- খয়রাতসহ নানা আয়োজনে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের খোশ মেজাজে ঈদের আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
যদিও বয়স ও আর্থিক অবস্থাভেদে ঈদের এ আনন্দ অনেক সময় থার্মোমিটারের পারদের মতো উঠানামা করে, তবে তা সাময়িক।
ঈদের দিন মুসলমান আত্মীয় ̄স্বজনেরা একে অপরের বাড়িতে সাদর অতিথি হিসাবে আপ্যায়িত হন, বাদ পড়েন না পাড়াপড়শি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও। দাওয়াত পেয়ে তাঁদেরকেও সাদরে মুসলমানের বাড়িতে আথিয়তা গ্রহন করতে দেখা যায়, যা এ দেশ ধর্মীয় রীতির পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতির ̄স্বাক্ষর ̈বহন করে।
কিন্তু এবারের ঈদ অন্যান্য ̈বারের ঈদের মতো নয়, এবারের ঈদে ̄যুক্ত হয়েছে ভীতসন্ত্র’স্তা। কোভিড১৯ নামক এক প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের অনিশ্চিত কালো থাবায় লক ডাউন, সোস্যাল ডিস্টান্সিং ,কোয়ারেইনটাইন, আইসোলেশন, পিপিই, হ্যান্ড সেনিটাইজার, সাবান জলে হাত ধোয়া সহ নানা বৈচিত্রময় দেশি বিদেশি শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিটা মানুষ আজ কুপোকাত।
প্রাণঘাতি এ ভাইরাস ধনী, গরীব, ধর্ম, বর্ণ, সামাজিক অবস্থান বা আর্থিক বিষয়াবলী বিবেচনায় নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি। বহুরূপী এ ভাইরাস প্রতিটি মানুষের মধ্যে এক অজানা শঙ্কার সৃষ্টি করে বিশ্বব্যাপী মানুষের সাথে মানুষের বিভেদ সৃষ্টি করে পৃথিবীময় তার রাজত্ব কায়েম করে নির্বিঘ্নে প্রাণ সংহার করে চলেছে।
ঈদের খুশিতে পরস্পর পরস্পরের সাথে কুশল বিনিময় করে নিজ নিজ আপনজন ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাস ভাগাভাগি করে নেবে সেটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে আজ সেটা বন্ধ হবার জোগাড়। সবার মধ্যে অজানা সন্দিহান মৃত্যুভীতি এবং বিতর্কিত ধূম্রজালিকার সৃষ্টি করে আপনজনের মাঝে দূরত্বে সৃষ্টি করে দিয়েছে। বাঁধ সেধেছে খুশির এ দিনে আপনজনকে কাছে না পাওয়ার মনঃকষ্ট, সেটা বলে বোঝানো যায় না। দূরদূরান্তে আটকে পড়া বাবা- মায়ের শূন্যতায় কিশোর কিশোরী এবং ছোট বাচ্চাদের কাছে কোভিড-১৯ আগমন এক অশনি সংকেত, যা তাদেরকে ঈদের আনন্দ উচ্ছ্বাস থেকে বঞ্চিত করলো ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা অনুযায়ী আক্রান্তের অতি সামান্যই সংকটাপন্ন বলে জানানো হচ্ছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই মরতে হবে এমন কোনো কথা নেই, তা হলে কেন এতো ভীতি ? স্পর্শভয়ে আমরা কেন ঘরের কোনে সিটিয়ে থাকবো ?
করোনার সাথে টিকে থাকতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই কৌশলী হতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অথর্ব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চিরচারিত কোলাকুলি বা করমর্দন বাদ দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে টেলিফোন, মেসেস, সোস্যাল মিডিয়ায় পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের কৌশলগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দঘন আমেজ বজায় রাখা আমাদের মানবিকতার পরিচয় বহন করবে।
মনের মধ্যে জেঁকে বসে থাকা করোনা ভাইরাসের ভীতি ঝেড়ে ফেলে মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে
স্থবিরতার বন্ধন ছিন্ন করে মানবতাকে জয় করাই হবে আমাদের আজকের এবং আগামীর মূল লক্ষ্য।
আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। আমিন।