রাজধানীর উত্তরা আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর সেক্টরের ১/এ নং রোডের ২৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে অবস্থিত মায়ের সম্পত্তি বিক্রি করতে বাঁধা দেওয়ায় বড় ভাই নুর উদ্দিন মাহমুদ শাহিন ওরফে সিডি শাহিনের রোষানলের শিকার হয়েছে তার আপন ছোট দুই ভাই সজল মাহমুদ অনি ও শ্যমল মাহমুদ অঞ্জন। সেইসাথে সে তার মা শাহানা রশিদকেও ছেড়ে কথা বলছে না। মায়ের উপর নানাভাবে চালাচ্ছে মানুষিক নির্যাতন এবং ছোট দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে করছে নানারকম হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা ও জিডি। এতে অসহায় হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার বলে অভিযোগ উঠেছে।
নুর উদ্দিন মাহমুদ শাহিন ওরফে সিডি শাহিন এক সময়ের আলোচিত পর্ণ ভিডিও নির্মাতা ও বাজারজাতকারী।
জানা যায়, উক্ত হোল্ডিংস্থ প্লটটির প্রকৃত মালিক হলেন তার মা শাহানা রশিদ। তিনি ১৯৮২ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর মালিকানাধীন এ প্লটটি ঢাকা সদর জয়েন্ট সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে রেজিষ্ট্রিকৃত ১৬৯৮ নং লীজ দলিল মুলে নিজ নামে রেজিষ্ট্রি করে নেন। এরপর থেকে তিনি তার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে আসছেন। রাজউকের লে-আউট নকশা মোতাবেক প্লটটি ৩.৫ কাঠা আয়তনের। এই প্লটে তিনি রাজউকের অনুমোদিত একটি চারতলা ভবন নির্মান করেছেন। ওই ভবনের ২য় তলায় তিনি তার দুই পূত্রদের নিয়ে বসবাস করছেন। এখানে তিনি চন্দ্রিমা শিল্প সাহিত্য পরিবার নামে একটি সামাজিক সংগঠনের অফিস বানিয়েছেন। তিনি এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। তিনি একাধারে কবি ও চারুশিল্পি। তার লেখা অনেক বই বাজারে বহুল আলোচিত।
শাহানা রশিদ কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার বড় ছেলে নুর উদ্দিন মাহমুদ শাহিনের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে পর্ণ ভিডিও নির্মাণ ও বাজারজাত করার অপরাধে মামলা হয়। তখন থেকে দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে পালিয়ে ছিল। বর্তমানে সে দেশে এসে আমার এই বাড়িটি বিক্রি করার পায়তারা করছে। এর আগে সে ২০১৫ সালে আমাকে নানা প্রলোভন ও অনেক মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই ভবনের নীচতলা এবং দ্বিতীয়তলা তার নিজ নামে হেবা করে নেয়।
ছোটবেলা থেকেই সে ছিল একটু দুস্ট প্রকৃতির। মায়ের মন তাই তার দুস্টুমি চোখে পড়েনি। ভেবেছি, বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না সে ঠিক হয়নি। পালিয়ে থেকে সে ফোনে কান্নাকাটি করেছে। বলেছে, মা ভুল হয়ে গেছে, মাফ করে দাও, এরকম ভুল আর কখনো হবে না। আমার সরল মন, তাই তার সব কথা বিশ্বাস করেছি। কানাডায় পলাতক থাকাবস্থায় সে আমাদের কাছ থেকে অনেক টাকা পয়সা নিয়েছে।
হেবা করার সময় সে বলেছে, তোমাদের সকলের খরচ আমি চালাব। বাবার অবর্তমানে ছোট দুই ভাইয়ের দায়িত্ব আমি নিব। তোমাদের আর চিন্তা করতে হবে না। শুধু আমাকে তোমার বাড়ীটি হেবা করে দাও। আমি তখন ভেবেছি, সে তো আমার সন্তান। তার নামে বাড়ি থাকা আর আমার নামে থাকা একই কথা। আর আমি কয়দিনই বা বাঁচব৷ তাই ছেলেদের সুখের কথা ভেবে বড় ছেলের নামে ভবনটির নীচতলা ও দ্বিতীয়তলা এবং মেঝ ও ছোট ছেলের নামে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ তলা হেবা করে দিয়েছি। আমার নামে কিছুই রাখিনি। এরপর থেকে তার আসল রুপ দেখাতে শুরু করে। দিন নেই, রাত নেই ২৪ ঘন্টাই বিভিন্ন মেয়েদেরকে নিয়ে এই বাড়িতে আড্ডা জমাতো। সেই আড্ডায় মদ, নাচানাচি ও অশ্লিলতা চলত নির্দিধায়। সে শুধু বাহিরের মেয়েদের নিয়ে অশ্লিলতা করেনি। বাড়ির বৌদের প্রতিও ছিল তার অশ্লিলতার ললুপ দৃষ্টি। কু-নজর ছিল তার সমস্ত চোখ জুড়ে। আমার ছোট ছেলের হবু স্ত্রীর সাথে সে নাচানাচি করেছে, দৈহিক সম্পর্ক করেছে। এতে করে ছোট ছেলের সাথে তার আর বিয়ে হয়নি। আমি তার এসব কুকর্মের প্রতিবাদ করলে সে আমার উপর চালাত নানারকম মানুষিক নির্যাতন। বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও, বাড়ি বিক্রি করে দেবে বলে হুমকি দিত। বর্তমানে সে আমার কিংবা আমার দুই ছেলের কোন খোঁজ রাখছে না। উল্টো আমাদেরকে হেনস্তা করার জন্য চালাচ্ছে নানামুখি ষড়যন্ত্র। তার ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে আমি গত ৬/৮/২০২০ ইং তারিখে উল্লেখিত হেবা বাতিল করার জন্য আদালতে মামলা করেছি। মামলা নম্বর- ৩২৯/২০২০।
তার এ ধরনের অপকর্ম ও নানামুখি ষড়যন্ত্রের কারণে বর্তমানে আমি ও আমার দুই ছেলে চরমভাবে অসহায় হয়ে পড়েছি। তাই বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনার জন্য মিডিয়া কর্মী হিসেবে আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
এ ব্যপারে তার মেঝ ছেলে সজল মাহমুদ অনি বলেন, ভাইয়া নুর উদ্দিন মাহমুদ শাহিনের অপকর্মের কথা কি আর বলব। তাকে সবাই চেনে সিডি শাহিন হিসেবে। সে অনেক মেয়েদের সাথে দৈহিক মেলামেশা করে এবং তা গোপন ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করে। পরবর্তীতে সেসব ভিডিও সিডি আকারে বাজারে বিক্রি করে। এসব অশ্লিল সিডি দিয়ে সে বহু মেয়েদের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেইল করে প্রচুর টাকা নিয়েছে। সেসব মেয়েরা লাজ লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি। সেসময় আমরা খুবই ছোট ছিলাম। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর সে দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে পালিয়ে ছিল। কানাডায় থেকে সে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগার মত কিছু স্ট্যাটাস দিয়েছে। বর্তমানে সে কানাডার নাগরিকত্ব নিয়ে দ্বৈত পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। সেখানে তার গাড়ির দুইটি শোরুম আছে। মাঝে মধ্যে সে ঢাকায় আসে এবং বিভিন্ন মেয়েদেরকে কানাডা নিয়ে যাবে বলে তাদের সাথে দৈহিক মেলামেশা করে এবং তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করে। কিছুদিন আগে সে কানাডা থেকে দেশে এসে আমাদের এই বাড়িটি বিক্রি করার পায়তারা করছে। আমাদের দুই ভাইকে একেকজনকে এক কোটি টাকা করে দিবে বলে প্রস্তাব দিয়েছে। বলেছে, এ টাকা দিয়ে তোরা ১৮ নম্বর সেক্টরে বাড়ি করে সেখানে থাকতে। আমরা স্ট্রেট না করেছি। বলেছি, এই বাড়িতে আমাদের জন্ম। এই বাড়িতে বেড়ে ওঠা। আমরা এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাব না। এই বাড়ির ভাড়ার টাকায় আমাদের সংসার চলে।
তিনি আরো বলেন, আমি টুকটাক ব্যবসা করি। আর ছোট ভাই সজল মালয়েশিয়ায় একটি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করে। আমার তেমন কোন ইনকাম নেই। সে আমাদের দুই ভাইকে হেনস্তা করার জন্য এই বাড়ির গ্যাস, বিদুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দপ্তরে ঘোরাঘুরি করেছে। কিছুদিন আগে আমরা আদালতে যাওয়ার আগের দিন গ্যাস ও ওয়াসার লোক এসে আমাদেরকে কোন রকম পূর্ব নোটিশ না দিয়ে গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা অনেক কষ্টে বকেয়া বিল পরিশোধ করে পুনরায় সংযোগ দুটি স্থাপন করি। রাজউকের ইন্সপেক্টর মুরাদ উল্লাহ স্ব-শরীরে এসে নিচতলার পাকিং ও ছাদের চিলেকোঠা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশনা দিয়ে গেছে।
বর্তমানে ভাইয়া আমাদেরকে আর্থিকভাবে পঙ্গু ও মায়ের যাতে স্বাভাবিক মৃত্যু হয় সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সে পুরো বাড়ির মালিক হবে এবং বাড়িটি বিক্রি করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করতে পারবে। মায়ের যাতে স্বাভাবিক মৃত্যু হয় সেজন্য সে নানাভাবে মাকে মানুষিক নির্যাতন করছে। এর আগে সে তার প্রথম স্ত্রীকে দিয়ে বাবাকে মেরে ফেলার জন্য নানাভাবে মানুষিক চাপ সৃষ্টি করেছিল। ভাবী বাবার সামনে মোবাইলের ভিডিও ক্যামেরা অন করে বলেছিল, আমাকে কেন এভাবে তেড়ে এসে মারতে চাচ্ছেন বাবা। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তার নির্যাতন সইতে না পেরে বাবা ষ্ট্রোক করে এই পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুক।
সে ইতোমধ্যে চারটা বিয়ে করেছে। তার ১ম স্ত্রী বর্তমানে এই বাড়িতে থাকে, ২য় ও ৩য় স্ত্রীর কোন খোঁজ খবর নেই এবং ৪র্থ স্ত্রী থাকে কানাডায়। তার এখন একটাই স্বপ্ন আমাদের দুই ভাইকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করা এবং মায়ের যাতে স্বাভাবিক মৃত্যু হয় সেই চেষ্টা করা। এতে করে একদিকে যেমন সাপও মরবে অন্যদিকে লাঠিও ভাঙ্গবে না। কিন্তু আমরা দুই ভাই প্রতিজ্ঞা করেছি, না খেয়ে মরে যাব তবু এ বাড়ি ভাইয়াকে বিক্রি করতে দিব না। তাইতো মাকে স্বান্তনা দিয়ে গানের সুরে সুরে বলি, মাগো, ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে, তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি, তোমার ভয় নেই মা আমরা, প্রতিবাদ করতে জানি।
এর আগে ভাইয়া আমাদের বাবার নামে থাকা গাজিপুরের সাড়ে পাঁচ কাঠা জায়গা প্রথমে নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করে নেয় অত:পর সেই জমি তার প্রথম স্ত্রী দীপা চৌধুরীর নামে ট্রান্সফার করে দেয়।
এ ব্যপারে নুর উদ্দিন মাহমুদ শাহিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এসব মিথ্যে কথা। গত ২৫ বছর যাবৎ আমি অনেক কষ্ট করে মা বাবাকে ভরন পোষন দিয়েছি । ছোট ভাইদেরকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। সজলকে লেখাপড়া করার পাশাপাশি ইনকাম করার জন্য অনেক টাকা খরচ করে আমেরিকা থেকে কানাডা নিয়ে গেছি। এসব ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে। চাইলে আপনাদেরকে সব সরবরাহ করতে পারব। চলবে-