এক সময়ের জনপ্রিয় জাদু আবার ফিরে আসছে, টেলিভিশন ও সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে। এই জাদুকরী জগতে এখন যুক্ত হচ্ছেন নতুন প্রজন্মের জাদুশিল্পীরা, যাদের মধ্যে নারী ও ভিন্ন লিঙ্গের মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
প্রাচীন মিশরে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে ডেডি নামের এক জাদুকরের কৌতুক প্রদর্শনের মাধ্যমে জাদুবিদ্যার সূচনা হয়েছিল। সেই থেকে, সময়ের সাথে সাথে এর রূপ বদলেছে, কিন্তু এর আকর্ষণ আজও অটুট।
বর্তমানে, টেলিভিশন প্রতিভা অন্বেষণমূলক অনুষ্ঠান এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন ইউটিউব ও টিকটকের কারণে জাদু আবার জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই মাধ্যমগুলোতে জাদুশিল্পীরা তাদের কৌশল দেখিয়ে লাখ লাখ অনুসারী তৈরি করেছেন।
এর সাথে, অনলাইনে জাদু শেখার টিউটোরিয়ালের সংখ্যাও বাড়ছে, যা দর্শকদের ঘরে বসেই জাদু শিখতে উৎসাহিত করছে।
একসময় জাদুকরদের গোপন কৌশলগুলো গোপন রাখা হতো। কিন্তু এখন, ইন্টারনেটের যুগে, অনেক কিছুই উন্মুক্ত হয়ে গেছে।
এমনকি, জাদু জগতে নারীদের প্রবেশাধিকারও সুনিশ্চিত হয়েছে। একসময় যেখানে নারীদের সদস্যপদ পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো, সেখানে এখন তারা এই পেশায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
উদাহরণস্বরূপ, সোফি লয়েড নামের এক নারী, যিনি একসময় পুরুষের ছদ্মবেশে ‘ম্যাজিক সার্কেল’-এ যোগ দিয়েছিলেন এবং পরে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তাকে সম্প্রতি পুনরায় এই সংগঠনের সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে।
এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বলা যায়, এখন জাদু আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজলভ্য। এখনকার তরুণরা মঞ্চের বড় আকারের জাদুর চেয়ে হাতের কাছের জাদু, যেমন কার্ড বা কয়েন নিয়ে খেলা – এগুলো বেশি পছন্দ করে।
এটি শেখা তুলনামূলকভাবে সহজ এবং দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়।
লন্ডনের কোভেন্ট গার্ডেনের মতো জনবহুল স্থানে এখন অনেক জাদুকর তাদের কৌশল প্রদর্শন করেন, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে। তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে হাসি ফোটান এবং তাদের বিনোদন দেন।
এই পেশা এখন শুধু পুরুষদের একচেটিয়া নয়, বরং নারী এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যও উন্মুক্ত হয়েছে।
‘ম্যাজিক সার্কেল’-এর প্রথম নারী চেয়ারপার্সন লরা লন্ডন জানান, জাদু শিল্পে দ্রুত পরিবর্তন এসেছে। এই শিল্পের সাথে এখন আরও বেশি নারী এবং তরুণ যুক্ত হচ্ছেন।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ম্যাজিক সোসাইটি’র সেক্রেটারি স্যামুয়েল স্টিফেনস বলেন, তাদের সংগঠনের সদস্যরাও বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন, যেখানে নারী এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্যরাও রয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে, তরুণ প্রজন্মের কাছে জাদুকরদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ইউটিউব বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে জাদুকরদের কৌশল দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হয় এবং জানতে চায় কীভাবে তারা এটি করছে।
এই আগ্রহ থেকেই অনেকে জাদু শিখতে শুরু করে।
জাদু এখন আর শুধু পুরনো দিনের মতো বড় আকারের মঞ্চের খেলা নয়। এটি এখন আরও অ্যাক্সেসযোগ্য এবং সবার জন্য উন্মুক্ত।
তাই, জাদুকরের পোশাক এখন যে কেউই পরতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian