বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা: ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় বড় কোম্পানিগুলো, পূর্বাভাস স্থগিত।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেক বড় কোম্পানি তাদের আর্থিক পূর্বাভাষ (financial guidance) প্রকাশ করা স্থগিত করেছে। সম্প্রতি এমনটাই দেখা যাচ্ছে, যা বিনিয়োগকারী এবং বিশ্লেষকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রবণতা, বিশেষ করে বাণিজ্য নীতি এবং ভোক্তাদের চাহিদার পরিবর্তনের কারণে, বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বহুজাতিক কোম্পানি, যেমন – গাড়ি প্রস্তুতকারক স্টেলান্টিস (Jeep, Dodge ব্র্যান্ডের মূল কোম্পানি), জেনারেল মোটরস, মার্সিডিজ-বেঞ্জ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্ন্যাপ, এবং বিমান সংস্থা আমেরিকান এয়ারলাইন্স, ডেল্টা এয়ারলাইন্স, সাউথওয়েস্ট ও আলাস্কা এয়ার তাদের ভবিষ্যৎ আয়ের পূর্বাভাস দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
তারা মূলত শুল্ক নীতি, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, এবং ভোক্তাদের ব্যয় করার প্রবণতা কমে যাওয়া সহ বিভিন্ন কারণকে এর জন্য দায়ী করছে।
কোম্পানিগুলোর এই ধরনের পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। আর্থিক পূর্বাভাস স্থগিত করার ফলে বিশ্লেষকদের পক্ষে বাজারের গতিবিধি বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।
উদাহরণস্বরূপ, স্ন্যাপ তাদের দ্বিতীয় প্রান্তিকের জন্য পূর্বাভাস দিতে অস্বীকার করার পর শেয়ার বাজারে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়েছে।
ডেল্টা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) এড বাস্টিয়ান সতর্ক করে বলেছেন, মার্কিন অর্থনীতি সম্ভবত মন্দার দিকে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা মনে করি, এটা মূলত আমাদের সবচেয়ে সংবেদনশীল গ্রাহকদের জন্য, যাদের ভ্রমণ এখন ঐচ্ছিক।”
আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ভাইস চেয়ার স্টিভ জনসনও জানিয়েছেন, কম আয়ের আমেরিকানরা এখন আগের চেয়ে কম ভ্রমণ করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর এমন পদক্ষেপ কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কালের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
যদিও বর্তমান পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভিন্ন, কারণ সরকার এখন পর্যন্ত সেই ধরনের আর্থিক সহায়তা (যেমন- উদ্দীপনা প্যাকেজ) দেয়নি।
অর্থনীতিবিদ পল বেলাঁদ, যিনি সিএফআরএ-এর গবেষণা বিভাগের প্রধান, সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “কোম্পানিগুলোর পূর্বাভাস প্রত্যাহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এটি অনিশ্চয়তা অনেক বাড়িয়ে দেয়।”
এই পরিস্থিতিতে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে আসন্ন দিনগুলোতে আরও অস্থিরতা দেখা যেতে পারে।
এই পরিবর্তনের ঢেউ বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও আসতে পারে, বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়তে পারে।
যদিও এর সরাসরি প্রভাব এখনই বোঝা যাচ্ছে না, তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন