মনের কথা বলে রান্নার সরঞ্জাম: বী উইলসন-এর ‘দ্য হার্ট-শেপড টিন’
রান্নাঘরের জিনিসপত্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা কেমন? নিছক ব্যবহারের বাইরেও এদের কি অন্য কোনো পরিচয় আছে? সম্প্রতি প্রকাশিত বী উইলসন-এর নতুন বই ‘দ্য হার্ট-শেপড টিন: লাভ, লস অ্যান্ড কিচেন অবজেক্টস’ এই প্রশ্নগুলোর গভীরে প্রবেশ করে।
বইটিতে লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে আমাদের রান্নাঘরের সাধারণ জিনিসগুলো – থালা-বাসন থেকে শুরু করে হাঁড়ি-পাতিল – আমাদের আবেগ, স্মৃতি আর অভিজ্ঞতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে।
বইটির শুরুটা হয় লেখকের ব্যক্তিগত একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে। ২০২০ সালে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর, তিনি আবিষ্কার করেন তাঁর হৃদয়ের আকারের একটি টিন, যা তিনি তাঁর বিয়ের কেক বানানোর জন্য ব্যবহার করেছিলেন।
এই টিনটি যেন তাঁর অতীতের অনেক স্মৃতিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। বইটিতে লেখক শুধু নিজের কথাই বলেননি, বরং বিভিন্ন মানুষের রান্নাঘরের জিনিসপত্রের গল্প তুলে ধরেছেন।
কারো কাছে একটি বিশেষ বাটি প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি বহন করে, আবার কারো কাছে একটি প্রেসার কুকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন।
উইলসন তাঁর বইয়ে দেখিয়েছেন, কীভাবে রান্নাঘরের সাধারণ জিনিসগুলি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। তিনি জানিয়েছেন, মানুষ হিসেবে আমরা প্রায়ই আমাদের পছন্দের জিনিসগুলির সঙ্গে এক ধরনের মানসিক সম্পর্ক তৈরি করি।
একটা প্লেট, যা থেকে খেতে ভালো লাগে, অথবা একটা বাটি যা প্রিয়জনের কথা মনে করায়, সেগুলি যেন আমাদের জীবনের গল্প বলে।
বইটিতে বিভিন্ন দেশের রান্নার সরঞ্জাম এবং তাদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গল্পগুলোও তুলে ধরা হয়েছে। ভেনেজুয়েলার সাশা কোরিয়ার কথা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২০০২ সালে হুগো চাভেজের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তাঁর পরিবার টানা ৬০ দিন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়েছিলেন। এমনকি, আইসল্যান্ডের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সেখানকার মানুষজনও সরকারের নীতির প্রতিবাদে কিচেনওয়্যার নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন।
লেখিকা তাঁর পরিবারের চীনামাটির বাসনপত্রের প্রতি দুর্বলতার কথাও উল্লেখ করেছেন। তাঁর ঠাকুরদা একসময় ওয়েজউডের প্রোডাকশন ডিরেক্টর ছিলেন।
উইলসন জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের ‘কুতানি ক্রেন’ নামের চীনামাটির বাসনপত্রের প্রতি অনেকেরই বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। এই বাসনগুলি যেন অতীতের অনেক স্মৃতি আজও ধরে রেখেছে।
বী উইলসন-এর এই বইটি ভালোবাসার গল্প, হারানোর গল্প এবং রান্নাঘরের জিনিসপত্রের মাধ্যমে আমাদের জীবনের গল্প। বইটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে সামান্য একটি রান্নার সরঞ্জামও আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
বইটি আমাদের নিজেদের রান্নাঘরের দিকে তাকাতে এবং সেখানে লুকিয়ে থাকা গল্পগুলো খুঁজে বের করতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান