ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা আবার নতুন মোড় নিয়েছে। ওমানের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিতব্য এই পঞ্চম দফা আলোচনায় দুই দেশই তাদের পুরোনো অবস্থানে অনড় রয়েছে। মূলত ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া নিয়েই যত বিপত্তি।
আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখা এবং এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা। তবে, এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। উভয় দেশই তাদের দাবিতে অনড়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইরান কোনো ধরনের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না। অন্যদিকে, ইরান এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বক্তব্য, আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানো যেতে পারে, তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করা সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচি থাকতে পারে, তবে তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না। কিন্তু এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সহজ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে, ইরানের নির্মাণ খাতের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তেহরান এই পদক্ষেপকে ‘নৃশংস, অবৈধ এবং অমানবিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এই আলোচনার ফল উভয় পক্ষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা সীমিত করতে, যা এই অঞ্চলে একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করতে পারে। অন্যদিকে, ইরান চাইছে তাদের অর্থনীতির ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিতে।
আগের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে ২০১৫ সালের জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (JCPOA) চুক্তি বাতিল করেছিলেন। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হয়েছিল।
ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ইরানের উপর অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেন, বিশেষ করে দেশটির তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেন।
জবাবে ইরানও কঠোর অবস্থান নেয় এবং যেকোনো ধরনের আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা ২০১৫ সালের চুক্তির সীমা ছাড়িয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করে। এপ্রিল মাস থেকে ওমানের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হলেও, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এখনো একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়।
আলোচনা ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ট্রাম্প বারবার সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন। ইসরায়েল, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের আলোচনার বিরোধী, তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে তারা কখনোই দেবে না।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার খবরের পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি তাদের ওপর কোনো হামলা হয়, তাহলে এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী থাকতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই অস্থির পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে বাংলাদেশের সুস্পষ্ট অবস্থান রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা