ইউরোপে একজন শুক্রাণু দাতার বিরল জিনগত ত্রুটির কারণে অন্তত ৬৭ জন শিশুর জন্ম হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন ইতিমধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।
এই ঘটনায় শুক্রাণু দান সংক্রান্ত বিধি-নিষেধের দুর্বলতা নতুন করে সামনে এসেছে এবং উন্নত নিয়ন্ত্রণের দাবি উঠেছে।
ফরাসি গবেষক এদভিজ কাস্পারের মতে, ২০০৮ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে এই ত্রুটি পাওয়া গেছে।
এই শিশুদের জন্ম হয়েছে এমন ৪৬টি পরিবার শনাক্ত করা হয়েছে। মিলানে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় সোসাইটি অফ হিউম্যান জেনেটিক্সের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এই তথ্য উপস্থাপন করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই শুক্রাণু দাতার ‘টিপি৫৩’ (TP53) নামক একটি জিনে বিরল মিউটেশন ছিল, যা সম্ভবত ‘লি-ফ্রাউমেনি সিন্ড্রোম’-এর কারণ। এই সিন্ড্রোম শরীরে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
ডা. কাস্পার জানান, ওই দাতার শুক্রাণু থেকে জন্ম নেওয়া শিশুরা বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, স্পেন, সুইডেন এবং যুক্তরাজ্যে বসবাস করছে।
তাদের মধ্যে ১০ জনের ব্রেইন টিউমার ও হজকিন লিম্ফোমার মতো ক্যান্সার ধরা পড়েছে। এছাড়া আরও ১৩ জন শিশু এই জিনের ধারক, তবে তাদের এখনো ক্যান্সার হয়নি।
চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
কারণ, তাদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া, তাদের সন্তানদের মধ্যেও এই জিন সঞ্চারিত হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত পরীক্ষার অংশ হিসেবে শিশুদের পুরো শরীরের এমআরআই স্ক্যান, মস্তিষ্কের এমআরআই এবং পরবর্তীতে তাদের অভিভাবকদের ব্রেস্ট ও পেটের আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে টিউমার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব, যা রোগীদের ভালোভাবে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।
বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শুক্রাণু দানের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ ভিন্ন।
যেমন, ফ্রান্সে একজন দাতা সর্বোচ্চ ১০ বার শুক্রাণু দিতে পারেন। ডেনমার্কে এই সংখ্যা ১২ এবং জার্মানিতে ১৫। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নে (European Union) এ বিষয়ে কোনো সমন্বিত নিয়ম নেই।
ইউরোপীয় স্পার্ম ব্যাংক (European Sperm Bank)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জুলি পাউলি বুডজ বলেছেন, তাঁরা এই ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
তিনি আরও জানান, তাঁদের ব্যাংক প্রতিটি দাতার স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখে। তবে জেনেটিক স্ক্রিনিংয়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
বুডজ আরও বলেন, মানুষের শরীরে প্রায় ২০,০০০ জিন থাকে।
তাই, কোনো ব্যক্তির জিনগত ত্রুটি শনাক্ত করা সব সময় সম্ভব হয় না। এই কারণে, তাঁদের ব্যাংক আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিটি দাতার শুক্রাণু ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৭৫টি পরিবারের সন্তান জন্মদানের সীমা নির্ধারণ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে ইউরোপীয় পর্যায়ে উপযুক্ত বিধি-নিষেধ তৈরি করা দরকার।
একইসঙ্গে, শুক্রাণু দানের ক্ষেত্রে জিনগত পরীক্ষার মান উন্নত করতে হবে এবং দাতার সংখ্যা সীমিত করার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন