যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। তাদের আশঙ্কা, এই নীতিমালার কারণে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে, যা মার্কিন অর্থনীতিতে শুল্কের প্রভাব সম্পর্কে নতুন করে চিন্তাভাবনার জন্ম দিয়েছে।
ডুউক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকস অব রিচমন্ড ও আটলান্টার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক ত্রৈমাসিক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অস্থিরতায় প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের (সিএফও) মধ্যে অর্থনৈতিক প্রত্যাশা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় এক-চতুর্থাংশ সিএফও জানিয়েছেন, শুল্কের কারণে তারা ২০২৫ সাল পর্যন্ত তাদের কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা সীমিত করেছেন। অন্যদিকে, ৭০ শতাংশ জানিয়েছেন, শুল্ক নীতির কারণে তাদের কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনাতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
মাত্র ৬ শতাংশ কর্মী নিয়োগ বাড়াতে পারেন বলে জানিয়েছেন।
এই শুল্ক নীতি ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারছেন না, শুল্ক কত দিন বহাল থাকবে এবং কোন পণ্যের ওপর এর প্রভাব পড়বে।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা গুটিয়ে নিচ্ছে। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ২৫ শতাংশ সিএফও জানিয়েছেন, বাণিজ্য নীতির কারণে তারা চলতি বছরে তাদের মূলধনী ব্যয়ের পরিকল্পনাও কাটছাঁট করেছেন।
ডুউকের ফুকা স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক জন গ্রাহাম সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “শুল্ক একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ। অন্তত স্বল্প মেয়াদে এটি একটি বড় ঝুঁকি।”
তবে শুল্ক নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেও সিএফও-দের মধ্যে নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইতিবাচক ধারণা আগের তুলনায় সামান্য কমেছে।
গত কয়েক সপ্তাহে কর্পোরেট আমেরিকায় শুল্ক বিষয়ক উদ্বেগ অনেক বেড়েছে। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে যখন সিএফও-দের ব্যবসার প্রধান উদ্বেগের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল, তখন শুল্ক ছিল তালিকার নবম স্থানে।
কিন্তু এখন এটি এক নম্বরে উঠে এসেছে। গ্রাহাম বলেন, গত ২০ বছরে এমনটা দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, ভোক্তাদের আস্থা কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। কনফারেন্স বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্চ মাসে ভোক্তাদের আস্থা কমে গেছে, যা ২০২১ সালের জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন।
শুল্ক নীতি কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে দ্বিধা। ফার্স্ট রেট ব্লাইন্ডস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়ান মেসেঞ্জার জানান, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মেক্সিকো থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যের ওপর প্রায় ২০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি হয়েছে।
তিনি বলেন, “এই নীতিমালার কারণে সবাই বিভ্রান্ত।”
মেসেঞ্জার আরও জানান, তিনি তার ব্যবসার লাভ কমিয়ে এই শুল্কের একটি অংশ বহন করার এবং ভোক্তাদের ওপর বাড়তি দাম চাপানোর পরিকল্পনা করছেন।
তবে শুল্ক নীতির কারণে শুধুমাত্র ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, এর প্রভাব পড়তে পারে বিদেশি বাজারেও। বিদেশি দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যগুলোর চাহিদা কমিয়ে দেবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুল্ক নীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সাবেক উপদেষ্টা স্টিফেন মুর মনে করেন, ভোক্তাদের আস্থা কমে গেলে তা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি এই অবস্থার জন্য রাজনৈতিক বিভাজন এবং বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন