টেসলার শেয়ারের উত্থান-পতন: ভবিষ্যতের চাবিকাঠি স্ব-চালিত ট্যাক্সি?
বৈদ্যুতিক গাড়ির (electric vehicle – ইভি) প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ারের দামে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন এসেছে। একদিকে যেমন শেয়ারের দাম বেড়েছে, তেমনই এর ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
সম্প্রতি, টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (Chief Executive Officer – সিইও) ইলন মাস্কের কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
শেয়ারের দামে এই উত্থান-পতনের মূল কারণগুলো হলো—চীনের বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা, ইউরোপ ও চীনে বিক্রি কমে যাওয়া, সেইসঙ্গে মাস্কের কিছু বিতর্কিত রাজনৈতিক মন্তব্য।
মাস্কের সরকার পরিচালন দক্ষতা বিভাগ (Department of Government Efficiency – DOGE)-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তির প্রতি সমর্থন জানানোয় টেসলার ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
কিন্তু এরই মধ্যে, টেসলার শেয়ারের দামে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এর কারণ হতে পারে—শেয়ারের দাম অতিরিক্ত কমে যাওয়া এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসা। গত সপ্তাহে টেসলার কর্মীর সঙ্গে এক বৈঠকে মাস্ক ভবিষ্যতে কোম্পানির প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেবেন বলে জানান, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে।
তবে, টেসলার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো চীনের ইভি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি (BYD)-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা।
বর্তমানে, বিওয়াইডি বিশ্বব্যাপী ইভি বিক্রিতে টেসলার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। গত বছর টেসলার বিক্রি ১ শতাংশ কমেছিল, যেখানে আগের পাঁচ বছরে তা ছিল ৩৭ থেকে ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত।
টেসলার ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে স্ব-চালিত ট্যাক্সি (robotaxi) পরিষেবার ওপর।
মাস্কের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই বছরের শেষের দিকে টেক্সাসের অস্টিনে এই পরিষেবা চালু হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও অতীতে মাস্ক এই ধরনের পরিষেবা চালু করার বিষয়ে বেশ কয়েকবার সময়সীমা পরিবর্তন করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সময় মতো এই পরিষেবা চালু করা না যায়, তাহলে টেসলার শেয়ারের এই উত্থান বেশি দিন টিকবে না।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রথম প্রান্তিকের বিক্রির হিসাব প্রকাশ করা হবে, যেখানে বিক্রয়ে বড় ধরনের পতন দেখা যেতে পারে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এই পতন টেসলার ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারে।
ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষক অ্যাডাম জোনাস, এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও, টেসলার শেয়ার কেনার পরামর্শ দিয়েছেন।
কারণ, তাঁর মতে, এই দুর্বলতা স্বল্প সময়ের জন্য এবং ভবিষ্যতে টেসলা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (artificial intelligence – এআই) ও রোবোটিক্সের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে, বিনিয়োগকারী ক্যাথি উড মনে করেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেসলার শেয়ারের দাম ২,৬০০ ডলারে পৌঁছতে পারে।
তাঁর মতে, টেসলার লাভের ৯০ শতাংশ আসবে স্ব-চালিত ট্যাক্সি পরিষেবা থেকে।
বর্তমানে, টেসলার শেয়ারের দাম প্রায় ২৯০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০,০০০ টাকা)।
তথ্য সূত্র: সিএনএন