শিরোনাম: যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্ক: পয়ঃবর্জ্য সার হিসেবে ব্যবহারের ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ, বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়?
যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে, পয়ঃবর্জ্য (sewage sludge – পয়ঃনিষ্কাশন স্লাজ) বা শোধিত মানব বর্জ্যকে সার হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে কৃষিকাজে সারের যোগান দিতে এই পদ্ধতির ব্যবহার হলেও, এর সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে।
সম্প্রতি, এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বাড়ছে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে, পয়ঃনিষ্কাশন কেন্দ্রগুলোতে বর্জ্য শোধনের পর অবশিষ্ট অংশকে ‘বায়োসলিড’ (biosolids) বা জৈব কঠিন পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই বায়োসলিডগুলোতে ভারী ধাতু এবং অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে, যা মাটির উর্বরতা বাড়াতে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তবে, ওকলাহোমার মতো কিছু অঞ্চলের বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, এই সারের ব্যবহারের ফলে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি, মাছি ও অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রবও বাড়ছে, যা স্বাস্থ্যবিধির জন্য হুমকিস্বরূপ।
এই বিতর্কের মূল কারণ হলো, পয়ঃস্লাজে ‘পিএফএএস’ (PFAS – পার- এবং পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থ) নামক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি। এই রাসায়নিকগুলি ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ (forever chemicals) হিসেবে পরিচিত, কারণ এগুলো পরিবেশে সহজে ভাঙে না এবং মানুষের শরীরে জমা হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
পিএফএএস-এর কারণে কম ওজনের শিশু জন্ম নেওয়া, লিভারের রোগ এবং কিছু ক্যান্সারের মতো সমস্যা হতে পারে। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো নন-স্টিক কুকওয়্যার, খাদ্য মোড়ক, কার্পেট এবং কিছু প্রসাধনীতে পাওয়া যায় এবং বর্জ্য শোধনের সময় স্লাজে প্রবেশ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) জানিয়েছে, পয়ঃস্লাজ ব্যবহারের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি তাদের নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়েও বেশি হতে পারে। ওকলাহোমার মত কিছু রাজ্যে, এই স্লাজ ব্যবহারের কারণে ভূগর্ভস্থ পানিতে দূষণ এবং গবাদি পশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সেখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং স্লাজ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য চেষ্টা করছেন।
কৃষকদের মতে, রাসায়নিক সারের চেয়ে পয়ঃস্লাজ ব্যবহার করা অনেক সস্তা। এছাড়া, শহর ও পৌরসভাগুলোর জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এটি একটি সহজ উপায়।
অন্যান্য উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার খরচ অনেক বেশি, যেমন – বর্জ্য পোড়ানো বা ল্যান্ডফিলে জমা করা। উদাহরণস্বরূপ, ওকলাহোমা সিটিতে, এই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ হতে পারে।
এই বিতর্কের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। আমাদের দেশে, পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা একটি পরিচিত সমস্যা।
অনেক জায়গায়, অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদী-নালা বা জলাশয়ে ফেলা হয়, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
যদি পরিশোধিত বর্জ্যকে সার হিসেবে ব্যবহারের কথা ভাবা হয়, তবে তার আগে পিএফএএসের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি এবং এর ঝুঁকিগুলো ভালোভাবে যাচাই করতে হবে।
উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্জ্য শোধন করে, তা থেকে সার তৈরি করা যেতে পারে, যা একদিকে কৃষকদের জন্য উপকারী হবে, অন্যদিকে পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়তা করবে।
তবে, এই ক্ষেত্রে সরকারি নীতি ও কঠোর নজরদারির প্রয়োজন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক নিয়মকানুন তৈরি করতে হবে, যা পরিবেশের ক্ষতি করবে না এবং মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমাবে।
আমাদের দেশেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস