ছেলেবেলার শরীরে পরিবর্তনের সময়: সামাজিক মাধ্যমের যুগে অভিভাবকদের করণীয়। আজকাল শিশুদের মধ্যে বয়ঃসন্ধি অনেক দ্রুত শুরু হচ্ছে। আগে যেখানে কৈশোরের এই পর্যায় শুরু হতে কিছুটা দেরি হতো, সেখানে এখন অনেক শিশুই অল্প বয়সেই শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে।
এই সময়ে অভিভাবকদের জন্য তাদের সন্তানদের সঠিকভাবে গাইড করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে যখন সামাজিক মাধ্যমগুলো তাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, তখন এই চ্যালেঞ্জ আরও বাড়ে।
শিশুদের শরীর ও মনে পরিবর্তনের এই সময়ে অভিভাবকদের করণীয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন একজন খ্যাতনামা শিশু বিশেষজ্ঞা। আসুন, জেনে নেওয়া যাক সেই পরামর্শগুলো এবং কীভাবে অভিভাবকদের এই সময়ে তাদের সন্তানদের সাহায্য করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞের মতে, মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারণত ৮-৯ বছর বয়সে এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ৯-১০ বছর বয়সে বয়ঃসন্ধির লক্ষণ দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে, এর আগেও পরিবর্তন শুরু হতে পারে। তাই, অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে এবং শিশুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।
শিশু বিশেষজ্ঞের দেওয়া অভিভাবকদের জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিচে তুলে ধরা হলো:
১. **শুরুর সময় সম্পর্কে অবগত থাকুন**: আগে যেখানে ১১-১২ বছর বয়সে বয়ঃসন্ধি শুরু হত, সেখানে এখন অনেক শিশু ৮-৯ বছর বয়সেই শারীরিক পরিবর্তন অনুভব করে। অভিভাবকদের এই পরিবর্তনের সময় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।
২. **শিশুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন**: ছেলেমেয়ে উভয়ের সঙ্গেই বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তনগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তাদের শরীরের পরিবর্তন, হরমোনের প্রভাব, এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। তাদের প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করুন এবং তাদের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
৩. **সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হোন**: বর্তমান যুগে সামাজিক মাধ্যম শিশুদের জীবনে একটি অপরিহার্য অংশ। অভিভাবকদের বুঝতে হবে, সামাজিক মাধ্যম কীভাবে তাদের সন্তানদের আত্ম-সম্মান, শরীরের প্রতি ধারণা এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণকে প্রভাবিত করে। পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা সম্পর্কে তাদের সচেতন করতে হবে।
৪. **হরমোনের পরিবর্তনগুলি বুঝুন**: বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের কারণে শিশুদের মেজাজ এবং আচরণে পরিবর্তন আসে। অভিভাবকদের ধৈর্য ধরে তাদের পাশে থাকতে হবে এবং তাদের অনুভূতিগুলোকে সম্মান জানাতে হবে।
৫. **মনোযোগ সহকারে শুনুন**: শিশুদের কথা বলার জন্য নিরাপদ একটি পরিবেশ তৈরি করুন। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো সম্পর্কে জানতে চান এবং তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাদের কোনো বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে, তা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন।
বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে শিশুদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া খুবই জরুরি। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া। সামাজিক মাধ্যমের ভালো এবং খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করা এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখা অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন