যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের ওষুধ মিফেপ্রিস্টোন নিয়ে বিতর্ক: নতুন FDA প্রধানের ভূমিকা।
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের জন্য ব্যবহৃত একটি বহুল প্রচলিত ওষুধ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি দেশটির খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (FDA)-এর প্রধান হিসেবে ড. মার্টি মাকারিকে নিয়োগ দেওয়ার পর এই বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে। মিফেপ্রিস্টোন নামক এই ওষুধটির নিরাপত্তা এবং ব্যবহারবিধি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ভিন্নমত রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই ওষুধ হিসেবে মিফেপ্রিস্টোন ব্যবহার করা হয়। FDA-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে এই ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। শুরুতে এর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছু কঠোর নিয়ম ছিল। যেমন, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং রোগীর তিনটি সরাসরি সাক্ষাৎ আবশ্যক ছিল। এছাড়াও, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য জরুরি অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকতে হতো।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে FDA মিফেপ্রিস্টোনের নিরাপত্তা সম্পর্কে নতুন মূল্যায়ন করে এবং বিধিনিষেধ শিথিল করে। তবে, এই পরিবর্তনের ফলে ওষুধের ব্যবহারের জটিলতা বেড়েছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ওষুধটির বিরোধীরা বলছেন, অনলাইনে প্রেসক্রিপশন এবং ডাকযোগে ওষুধ পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার কারণে অনেক বেশি রোগীর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতা দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, চিকিৎসকরা বলছেন, মিফেপ্রিস্টোন ব্যবহারের ফলে গুরুতর সমস্যা খুবই কম হয়। আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ান্স অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস-এর মতে, ওষুধ ব্যবহারের পরে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (যেমন, সংক্রমণ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া) দেখা যায় ০.৩২ শতাংশের কম রোগীর ক্ষেত্রে। যদিও কিছু রোগী ওষুধের কারণে জরুরি বিভাগে যান, তবে এর কারণ সবসময় গুরুতর নয়। অনেক সময়, কোনো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই রোগীরা উদ্বেগের কারণে বা পরীক্ষার জন্য সেখানে যান।
মিফেপ্রিস্টোনের কার্যকারিতা বেশ ভালো। FDA-এর তথ্য অনুযায়ী, ওষুধটি ব্যবহারের মাধ্যমে ৯৭.৪ শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ভপাত সম্পন্ন হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। আবার, ০.৭ শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ভধারণ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা থাকে।
গর্ভপাতের অন্য একটি পদ্ধতি, যেমন – ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গর্ভপাতের সাফল্যের হার অনেক বেশি। আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ান্স অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস-এর সদস্য ডা. প্রতিমা গুপ্তা জানিয়েছেন, “যে কোনো ধরনের গর্ভপাতের ক্ষেত্রেই জটিলতা খুবই কম হয়।”
ওষুধটির নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতার দিক থেকে অন্যান্য সাধারণ ওষুধের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, মিফেপ্রিস্টোন একটি নিরাপদ ওষুধ। FDA-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে প্রায় ৬০ লক্ষ রোগী এই ওষুধ ব্যবহার করেছেন। ওষুধের কারণে মৃত্যুর হার খুবই কম, প্রতি ১০ লাখে মাত্র ২.৭ জন। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ আইবুপ্রোফেন-এর মতোই এর নিরাপত্তা রয়েছে, যা প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক কোটি মানুষ ব্যবহার করেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস