স্প্যানিশ শিল্পী জোয়ান মিরোর একটি বিখ্যাত চিত্রকর্মের নিচে লুকানো ছিল তার মায়ের একটি প্রতিকৃতি। সম্প্রতি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই গোপন চিত্রকর্মটি আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। এই চাঞ্চল্যকর আবিষ্কারের ফলে শিল্পী মিরোর জীবন এবং শিল্পকর্ম সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য জানা গেছে।
বার্সেলোনার ‘ফান্ডাসিও জোয়ান মিরো’ জাদুঘরে সংরক্ষিত শিল্পী মিরোর ১৯২৫ থেকে ১৯২৭ সালের মধ্যে আঁকা ‘পিন্তুরা’ (Pintura) শীর্ষক চিত্রকর্মটি নিয়ে গবেষণা করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। বহু বছর আগের একটি পুরনো এক্স-রে চিত্রের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন, নীল রঙের ক্যানভাসের নিচে অন্য একটি ছবি রয়েছে।
এরপর, তারা এক্স-রে, অতিবেগুনি রশ্মি, ইনফ্রারেড লাইট ও বিশেষ ধরনের ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবিটির গভীরে প্রবেশ করেন। গবেষণায় উঠে আসে, ‘পিন্তুরা’র নিচে রয়েছে মিরোর মায়ের একটি প্রতিকৃতি।
এই ছবি শিল্পী ক্রিস্টোফোর মন্টসেরাট জোর্বা এঁকেছিলেন। ছবিতে দেখা যায়, মার্জিত পোশাকে সজ্জিত এক মধ্যবয়সী নারী, যিনি আসলে জোয়ান মিরোর মা ডলোর্স ফেররা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মিরো সম্ভবত তার মায়ের প্রতিকৃতিটি অন্য একটি ক্যানভাস থেকে কেটে নিয়েছিলেন এবং সেটিকে ‘পিন্তুরা’র ওপর স্থাপন করেন। কেন তিনি এমনটা করেছিলেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে, শিল্প সমালোচকদের ধারণা, এর মাধ্যমে শিল্পী সম্ভবত তার পরিবারের রক্ষণশীলতা এবং তৎকালীন সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন।
জোয়ান মিরোর এই কাজটি ছিল যেন শিল্পী জীবনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন। তিনি প্রচলিত শিল্পকলার ধারা ভেঙে নিজস্ব একটি শৈলী তৈরি করতে চেয়েছিলেন।
মায়ের প্রতিকৃতিকে ঢেকে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি হয়তো সেই বিদ্রোহের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
এই আবিষ্কারের ফলে ‘ফান্ডাসিও জোয়ান মিরো’ জাদুঘরে একটি বিশেষ প্রদর্শনী ও তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে। প্রদর্শনীটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আন্ডার দ্য লেয়ার্স অফ মিরো: এ সায়েন্টিফিক ইনভেস্টিগেশন’।
তথ্যচিত্রটির নাম ‘এল সিক্রেট দে মিরো’। প্রদর্শনীতে ‘পিন্তুরা’ এবং ডলোর্স ফেররার মূল প্রতিকৃতি একসঙ্গে দেখার সুযোগ রয়েছে।
শিল্পকর্মের ইতিহাস অনুসন্ধানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এর মাধ্যমে শিল্পকলার জগতে লুকানো অনেক অজানা তথ্য সামনে আসছে, যা শিল্পবোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান