মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভারতীয় ছাত্রী, যিনি ফিলিস্তিন ইস্যুতে সমর্থন জানানোয় দেশটির ভিসা বাতিল করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাকে ‘সন্ত্রাসী সহানুভূতিশীল’ হিসেবেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এই ঘটনায় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
ঘটনার সূত্রপাত হয়, যখন রঞ্জনি শ্রীনিবাসন নামের ওই পিএইচডি শিক্ষার্থীর কাছে একটি ইমেইল আসে। ইমেইলটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কনস্যুলেট থেকে, যেখানে তার ভিসা বাতিলের কথা জানানো হয়।
এরপর তার জীবনে নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তা।
রঞ্জনীর অভিযোগ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুরুতে তাকে তেমন কোনো সহযোগিতা করেনি। ভিসা বাতিলের পর তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও স্কলার্স অফিসে (International Students and Scholars Office – ISSO) যোগাযোগ করেন, তখন দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
পরে ডিন ও উপদেষ্টাদের হস্তক্ষেপে আইএসএসও ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
ঘটনার কয়েকদিন পর, হঠাৎ করেই তার দরজায় কড়া নাড়ে কয়েকজন ব্যক্তি। তারা প্রথমে নিজেদের পুলিশ এবং পরে ‘ইমিগ্রেশন সুপারভাইজার’ পরিচয় দেয়।
কোনো পরিচয়পত্র দেখাতে না পারলেও, তারা রঞ্জনীকে জানায় যে তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
রঞ্জনি তাদের ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (ICE) এজেন্ট বলে সন্দেহ করেন।
রঞ্জনি জানান, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায়, যেখানে সাধারণত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ জোরদার, সেখানেও তাদের প্রবেশাধিকার ছিল।
এই ঘটনা তাকে ভীত করে তোলে। তিনি দ্রুত জিনিসপত্র গুছিয়ে কানাডার উদ্দেশ্যে নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করেন।
এরপর জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রঞ্জনীকে ‘সন্ত্রাসী সহানুভূতিশীল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এমনকি বিমানবন্দরের একটি ছবি প্রকাশ করে তাকে ‘সন্ত্রাসে সমর্থনকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। যদিও রঞ্জনি বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি মনে করেন, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার মত প্রকাশের কারণেই মূলত তাকে টার্গেট করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে তারা জানায়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে তারা সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।
তবে রঞ্জনীর মতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সাহায্য করতে তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি।
রঞ্জনীর ঘটনা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে।
অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে কথা বলার কারণে তাদেরও একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্টুডেন্ট ওয়ার্কার্স অফ কলম্বিয়া’ (UAW Local 2710) এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
তাদের মতে, রঞ্জনীর ঘটনা একটি ‘বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করেছে।
এই ঘটনার পর, যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে রঞ্জনি কানাডায় অবস্থান করছেন।
তিনি যদি তার ভিসা ফিরে পান এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পুনরায় ভর্তি করে, তারপরও যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়া নিয়ে তিনি সন্দিহান।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা