যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের কারণে বিশ্বজুড়ে অস্থির শেয়ার বাজার, বাংলাদেশের জন্য কী সম্ভাবনা?**
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি’র প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে তিনি আমদানি করা গাড়ির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে, বিশেষ করে গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে গাড়ি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর প্রভাব বেশ জটিল হতে পারে। কারণ, অনেক মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারক এবং যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করা বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে থাকে।
বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে, ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ার বাজারগুলোতে বড় ধরনের দরপতন দেখা যায়। ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক ০.৬ শতাংশ এবং জার্মানির ডিএএক্স সূচক ০.৮ শতাংশ কমেছে।
যুক্তরাজ্যের এফটিএসই১০০ সূচকও ০.৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ০.৬ শতাংশ কমেছে, যেখানে গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বড় ধরনের পতন হয়েছে।
টয়োটা মোটর কর্পোরেশনের শেয়ার ২ শতাংশ, হোন্ডা মোটর কোম্পানির ২.৫ শতাংশ, এবং নিসানের শেয়ার ১.৭ শতাংশ দর হারিয়েছে। এছাড়া, মিতসুবিশি মোটরস কর্পোরেশন ৩.২ শতাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচক ১.৪ শতাংশ এবং তাইওয়ানের তাইইক্স সূচক ১.৪ শতাংশ কমেছে।
এই পরিস্থিতিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জাপানের জন্য এই শুল্ক মওকুফের আবেদন জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জোরালোভাবে অনুরোধ করছি, যেন জাপানের উপর শুল্কের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর না করা হয়।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্কের কারণে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হতে পারে। এসএন্ডপি গ্লোবাল রেটিং-এর এশিয়া-প্যাসিফিক ক্রেডিট রিসার্চ বিভাগের প্রধান ইউনিস তান বলেছেন, “উচ্চ বাণিজ্য বাধা সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে।
এর সরাসরি প্রভাব পড়বে গাড়ি, ধাতু, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং প্রযুক্তি খাতের উপর।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বুধবার এসএন্ডপি ৫০০ সূচক ১.১ শতাংশ এবং ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ০.৩ শতাংশ কমেছে। প্রযুক্তি খাতের দুর্বলতার কারণে নাসডাক কম্পোজিট সূচক ২ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। যেহেতু বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করে, তাই এই শুল্কের কারণে আমদানি খরচ বাড়তে পারে।
এর ফলে বাজারে গাড়ির দাম বাড়তে পারে এবং সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে। বাণিজ্য যুদ্ধ চললে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে, তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পরোক্ষভাবে পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস