মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডেমোক্রেটিক পার্টির অভ্যন্তরে অস্থিরতার একটি চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত হতে যাওয়া একটি বইয়ে (Fight: Inside the Wildest Battle for the White House) আসন্ন নির্বাচনের পূর্বে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে দলের মধ্যে চলা উদ্বেগের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
বইটির লেখক, জোনাথন অ্যালেন ও অ্যামি পার্নেস-এর ভাষ্য অনুযায়ী, বাইডেন যদি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হতেন, সেক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রার্থী করাটা দলের জন্য ‘ভুল’ হত বলে মনে করতেন বাইডেনের শীর্ষ উপদেষ্টারা।
বইটিতে বলা হয়েছে, গত গ্রীষ্মে ডেমোক্রেটিক পার্টির কিছু প্রভাবশালী সদস্য এবং ডোনারদের (অর্থদাতা) বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়।
বাইডেনের উপদেষ্টারা তখন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, বাইডেন সরে দাঁড়ালে কমলা হ্যারিসকে প্রার্থী করতে হবে, যা দলের জন্য একটি বড় ভুল হবে।
তাদের মতে, হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবেন না।
এমনকি, বইটিতে এমনও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাইডেনের উপদেষ্টারা এই বিষয়ে ডোনারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিলেন এবং তাঁদের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।
বইটিতে আরও জানা যায়, বাইডেনের উপদেষ্টারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ডোনাররা আসলে বাইডেনকে সরিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে আনতে চাইছে।
তাঁদের অভিযোগ ছিল, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এমনটা করছেন।
উপদেষ্টারা মনে করতেন, দলের সাধারণ ভোটারদের সমর্থন বাইডেনের সঙ্গে রয়েছে এবং তাঁরা তাঁদের প্রার্থীপদ ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর।
তাঁরা ডোনারদের হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, এমনটা করলে তাঁরা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এমনকি, তাঁরা কমলা হ্যারিসকে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
তাঁদের বক্তব্য ছিল, হ্যারিসের জন সমর্থন খুবই কম, তাই তাঁকে প্রার্থী করা হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
বইটিতে আরও বলা হয়েছে, বাইডেনের উপদেষ্টাদের এই হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ডোনাররা তাঁদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন।
এর ফলস্বরূপ, ২১শে জুলাই বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
এই ঘটনার পর, ডেমোক্রেটিক পার্টিতে দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বইটিতে আরও জানা যায়, কমলা হ্যারিস প্রার্থী হওয়ার আগে এবং পরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমর্থন পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু ওবামা এবং তাঁর স্ত্রী মিশেল হ্যারিসের প্রতি তেমন আগ্রহ দেখাননি।
এমনকি, ২০০৯ সালে ওবামার নির্বাচনী সাফল্যের অনুষ্ঠানে হ্যারিসকে ভিআইপি এরিয়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
এই ঘটনাটিও হ্যারিসের মনে গভীর আঘাত হেনেছিল।
বইটিতে বলা হয়েছে, ওবামা মনে করতেন হ্যারিস ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন না।
কিন্তু যখন তিনি অনুভব করলেন তাঁর নিজের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তখন তিনি হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানান।
অবশেষে, ওবামা হ্যারিসের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন এবং তাঁর সমর্থনে এগিয়ে আসেন।
সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও হ্যারিসের প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন।
তবে বইটিতে বলা হয়েছে, আটলান্টা বিতর্কের রাতে পেলোসি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র: The Guardian