রমজান মাস জুড়ে ভোর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে যিনি হাঁক দেন, “ওঠো গো, সেহেরীর সময় হয়েছে!”— মিশরের কায়রোর রাস্তায় হাতে ড্রাম নিয়ে ভোরে এই ডাক দেওয়া লোকটির নাম মুসাহারাতি। শুধু মিশর নয়, লেবাননের সিডন কিংবা ভারতের পুরনো দিল্লিতেও এই দৃশ্য এখনো দেখা যায়।
রমজান মাস মুসলিমদের জন্য একটি পবিত্র সময়, যখন সকলে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা রাখেন। আর এই সময়ে সেহেরীর জন্য মানুষকে জাগানোর কাজটি করেন মুসাহারাতিরা, যা মুসলিম সংস্কৃতিতে গভীর তাৎপর্য বহন করে।
মুসাহারাতি সাধারণত একজন বয়স্ক ব্যক্তি হন, যিনি হাতে ড্রাম নিয়ে প্রতিটি বাড়ির সামনে যান। ড্রামের আওয়াজ আর বিশেষ কিছু ইসলামিক শব্দ উচ্চারণ করে তিনি ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তোলেন।
এই কাজটি শুধু একটি প্রথা নয়, বরং এটি একটি ভালোবাসার বন্ধনও তৈরি করে। পাড়া-মহল্লার শিশুরা তাদের খুব চেনে, তাদের সঙ্গে মেশে।
মিশরের কায়রোর বাসিন্দা এসাম সাঈদ তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া ড্রামটি বাজিয়ে আজও এই কাজটি করেন। তিনি তার পরিচিত শিশুদের নাম ধরে ডাকেন, “মায়া! মেন্না! ওঠো, সেহেরীর সময় হয়েছে!”
লেবাননের সিডনের বাসিন্দা মাহমুদ ফানাসও তার বাবার মতোই এই কাজটি করেন। তিনি বলেন, “ইয়া নাইম, ওয়াহহিদিল দাইম” অর্থাৎ, “হে ঘুমন্ত, এক আল্লাহর ইবাদত করো।”
তাদের এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার পেছনে রয়েছে গভীর আবেগ। আধুনিক যুগে অ্যালার্ম ঘড়ি বা মোবাইল ফোনের কল্যাণে মানুষ সহজেই সেহেরীর জন্য জেগে উঠতে পারে, কিন্তু মুসাহারাতিদের এই ঐতিহ্য এখনো অনেক জায়গায় টিকে আছে, কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভালোবাসার এক গভীর সম্পর্ক।
তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে মানুষ এখন অ্যালার্মের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ভারতের পুরনো দিল্লিতে উমার ইরশাদ নামের এক ব্যক্তি এখনো এই কাজটি করেন।
তিনি জানান, এই কাজটি তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেন। দিল্লিতে এই ঐতিহ্য দ্রুত হারিয়ে গেলেও, তিনি চান যতদিন বাঁচেন, ততদিন এই কাজটি করে যেতে।
বাংলাদেশেও ভোর রাতে সেহেরীর সময় মসজিদের মাইকে আজান দেওয়া হয়। এছাড়া অনেক এলাকায় পাড়ার মুরুব্বিরা মানুষকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন।
হয়তো তাদের কাজ করার ধরন আলাদা, কিন্তু মূল উদ্দেশ্য একই— রোজাদারদের সেহেরীর জন্য প্রস্তুত করা। এই ঐতিহ্যগুলো শুধু একটি সংস্কৃতি নয়, বরং এটি একটি সম্প্রদায়ের বন্ধন, যা রমজান মাসের পবিত্রতা আরও বাড়িয়ে তোলে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস