আশা ডিগ্রি: ২৫ বছর পরও রহস্যে মোড়া এক নিঁখোজের গল্প।
উত্তর ক্যারোলিনার ছোট্ট শহর শেলবি। ২০০০ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবসের সকালে এখানকার বাসিন্দারা এক হৃদয়বিদারক খবর শোনেন। ৯ বছর বয়সী আশা ডিগ্রি নামের এক ফুটফুটে মেয়ে ঘর থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছে।
এরপর কেটে গেছে ২৫টি বছর। কিন্তু আজও যেন এই শহরবাসীর মনে গভীর ক্ষত হয়ে আছে সেই ঘটনা। তদন্তকারীরা বহুবার চেষ্টা করেও কোনো কিনারা করতে পারেননি। সম্প্রতি, ডিএনএ পরীক্ষা এবং কিছু নতুন তথ্যের মাধ্যমে আবারও আলোচনায় এসেছে এই মামলাটি।
আশার পরিবার ছিল শেলবি শহরের পরিচিত মুখ। শান্ত ও মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচিত ছিল আশা। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, সে ছিলো খুব শান্ত স্বভাবের। মা-বাবার অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে সহজে বের হতো না।
তাহলে, কী এমন ঘটেছিল যে গভীর রাতে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে? ঘটনার দিন রাতে ভারী বৃষ্টি হয়েছিল। পরিবারের সবাই মিলে টিভির সামনে বসেছিলেন। এরপরই ঘটে এই অঘটন।
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মা দেখেন, মেয়ে বিছানায় নেই। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে এলাকার সবাই মিলে চেষ্টা করেন, কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি আশা’কে। খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে।
ঘটনার কয়েক মাস পর, আশার একটি ব্যাকপ্যাক পাওয়া যায় শহর থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে। সেই ব্যাগের ভেতর ছিল কিছু জামাকাপড় এবং আরও কিছু জিনিস। এর মধ্যে একটি টি-শার্ট ছিল, যা তার ছিল না।
এরপর কেটে গেছে বহু বছর। শহরের আনাচে-কানাচে, এমনকি মহাসড়কের পাশেও, ‘আশা’কে খুঁজে পাওয়ার আকুতি নিয়ে বিলবোর্ড লাগানো হয়েছিল। তাতে ছিল, যারা তথ্য দিতে পারবে তাদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণা।
দীর্ঘদিন পর, তদন্তকারীরা নতুন করে এই মামলার তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের অংশ হিসেবে, তারা ডেডমন পরিবারের ওপর নজর রাখা শুরু করেন। কারণ, আশার ব্যাগে পাওয়া কিছু আলামতের ডিএনএ’র সঙ্গে এই পরিবারের কয়েকজনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ডেডমন পরিবারের সদস্য, বিশেষ করে রয় লি ডেডমন এবং তার মেয়েদের জড়িত থাকার সম্ভাবনা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ডেডমন পরিবারের এক সদস্যের ডিএনএ-র সঙ্গে আশার আন্ডারশার্টের একটি নমুনার মিল পাওয়া যায়। এর পরেই সন্দেহের তীর আরও জোরালো হয়।
মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, আশার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে ডেডমন পরিবারের কেউ জড়িত থাকতে পারে। এমনকী, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যেকার কথোপকথন এবং কিছু টেক্সট মেসেজও সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আশার মা, ইকুয়েলা ডিগ্রি, এখনো বিশ্বাস করেন তাঁর মেয়ে জীবিত আছে। তিনি বলেন, “আমার এখনো আশা আছে। যতক্ষণ না কেউ প্রমাণ করতে পারবে যে সে নেই, আমি বিশ্বাস করব সে ফিরে আসবে।”
এই ঘটনার ২৫ বছর পরেও, আশা’র পরিবার এবং শেলবির মানুষজন এখনো একটি উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁরা চান, দ্রুত এই রহস্যের সমাধান হোক এবং আশা ফিরে আসুক তাদের মাঝে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন