ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা আরও বাড়ানো এবং সেখানে একটি ইউরোপীয় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে শান্তি আলোচনাকে আরও জোরদার করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে সমর্থন যোগাতে এবং রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করতে ইউরোপীয় দেশগুলো একজোট হচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রায় ৩০টি দেশের নেতা এবং ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধানরা অংশ নেন। মূলত, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্থাপনের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা যখন তীব্র হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে এই শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলো।
বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল ইউক্রেনকে কীভাবে আরও বেশি সামরিক সহায়তা দেওয়া যায় এবং ভবিষ্যতে শান্তি চুক্তি নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় সেনা মোতায়েন করা যায় কিনা। জানা গেছে, ব্রিটেন ও ফ্রান্স একটি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এমন একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছে, যা ইউক্রেনে ইউরোপীয় সশস্ত্র বাহিনীর সম্ভাব্য মোতায়েনকে সমর্থন করবে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, রাশিয়াকে পুনরায় আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখা।
বৈঠকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন জানান, ইউক্রেনকে ২ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি) প্রতিরক্ষা সহায়তা দেওয়া হবে। এই সহায়তার মধ্যে হালকা ট্যাংক, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তবে, এই ধরনের একটি সামরিক শক্তি তৈরি করা বেশ কঠিন হবে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনেক দেশ তাদের সামরিক সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। এখন আবার অস্ত্রশস্ত্রের মজুত বাড়াতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া, এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেবে কে এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো শান্তি চুক্তি লঙ্ঘিত হলে তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই বৈঠকের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন রাশিয়া প্রতিদিন মানুষ মারছে এবং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে।
বৈঠকের আগে, রাশিয়ার ড্রোন হামলায় খারকিভ অঞ্চলে অন্তত ১৮ জন এবং ডিনিপ্রোতে তিনজন আহত হয়েছে। এছাড়াও, জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের একটি ফ্রন্টলাইন এলাকায় শেলিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে কৃষ্ণসাগরে নৌ-চলাচল নিরাপদ রাখতে এবং ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে দীর্ঘ-পাল্লার হামলা বন্ধ করতে চুক্তি করেছে। তবে, উভয় পক্ষই এই চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে, যা একটি দীর্ঘ এবং কঠিন প্রক্রিয়া হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।