ভিয়েতনামের খাদ্যরসিকদের কাছে মাছের সস (নুয়োক মাম) এক অতি পরিচিত উপাদান। এই সস শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, বরং এটি ভিয়েতনামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
হ্যানয়ের “চ্যাপ্টার ডাইনিং” নামক একটি অভিজাত রেস্তোরাঁর শেফ কুয়াং ডুং এই মাছের সসকে কাজে লাগিয়ে খাবারের জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
শেফ ডুং, যিনি তার রান্নার শৈলীর মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেছেন, ঐতিহ্যবাহী ভিয়েতনামী খাবারের আধুনিক সংস্করণ তৈরি করেন। তার মেনুতে “বানহ টে” নামক একটি স্টিমড রাইস কেক পরিবেশন করা হয়, যা মাশরুম এবং কিমা করা শূকরের মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়।
এই খাবারের স্বাদ পরিপূর্ণ করার জন্য তিনি মাছের সসের ব্যবহার করেন। কাঁচা স্ক্যালপ ও পিকল করা ডাইকন শস্যের সাথে পরিবেশিত এই খাবারটিতে তাজা ধনে পাতার ব্যবহার এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
শেফ ডুং এর মতে, মাছের সস খাবারের স্বাদ তৈরির অন্যতম ভিত্তি।
শেফ ডুং শুধু ঐতিহ্যবাহী খাবারে নয়, বরং আধুনিক রান্নার ক্ষেত্রেও মাছের সসের ব্যবহার করেন। তিনি ফরাসি “হল্যান্ডাইজ” সসে ভিয়েতনামের এই বিশেষ উপাদানটি যোগ করেন, এমনকি আইসক্রিমেও এর স্বাদ যোগ করেছেন।
তার মতে, মাছের সস খুবই বহুমুখী এবং রান্নার জগতে এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
শেফ ডুং এর রান্নার জীবন শুরু হয় শৈশবে। অল্প বয়সেই মায়ের কাছ থেকে রান্না শিখেছিলেন তিনি। পরে, তিনি যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করার সময় বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় কাজ করেন এবং খাদ্য সম্পর্কে নতুন ধারণা লাভ করেন।
২০১৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং একটি ব্যাংকে চাকরি শুরু করেন। সন্ধ্যায় তিনি একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জুনিয়র শেফ হিসেবে কাজ করতেন।
২০১৫ সালে তিনি দুটো চাকরি ছেড়ে হ্যানয়ে একটি গ্যাস্ট্রো-পাব খোলেন, যদিও সেটি সফল হয়নি। এরপর ২০২১ সালে তিনি “চ্যাপ্টার ডাইনিং” রেস্তোরাঁটি খোলেন, যা স্থানীয় এবং মৌসুমী উপকরণ ব্যবহার করে খাবারের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
“চ্যাপ্টার ডাইনিং”-এর মেনু নিয়মিতভাবে ঋতু অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়, যা শেফের খাদ্য দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শীতকালে গরম এবং আরামদায়ক খাবার পরিবেশন করা হয়, আর গ্রীষ্মকালে পরিবেশন করা হয় হালকা ও তাজা খাবার।
পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে, মেনুতেও পরিবর্তন আনা হয়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত উপকরণ ব্যবহারের কারণে, সব সময় সব ধরনের উপাদান পাওয়া যায় না, তাই মেনুটিকে প্রকৃতির চাহিদার সাথে মানিয়ে নিতে হয়।
শেফ ডুং মনে করেন, মাছের সস শুধু নোনতা স্বাদ যোগ করে না, বরং খাবারের স্বাদ আরও গভীর করে তোলে। তিনি বিশ্বাস করেন, এটি রান্নার একটি জাদুকরী উপাদান।
তিনি সাধারণ “অমলেট”-এও মাছের সসের জাদু যোগ করার পরামর্শ দেন। তার মতে, তিনটি ডিম, দুই চা চামচ মাছের সস এবং কিছু পেঁয়াজ কুচি মিশিয়ে গরম তেলে ভাজলে দারুণ স্বাদের একটি অমলেট তৈরি করা সম্ভব।
আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে মাছের সস তৈরির প্রধান উপাদান – “অ্যানকোভি” মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে শেফ ডুং-এর মতো রন্ধনশিল্পীরা ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাদের খাদ্য তৈরির কৌশলকে নতুনভাবে সাজাচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস