নারীদের কি পুরুষের চেয়ে বেশি ঘুমের প্রয়োজন?
ঘুম মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম।
কিন্তু নারী ও পুরুষের ঘুমের চাহিদার মধ্যে কি কোনো পার্থক্য রয়েছে? আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, নারী এবং পুরুষের ঘুমের প্রয়োজনীয়তা মূলত একই, অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমের পরামর্শ দেওয়া হয়।
তবে, কিছু বিশেষ কারণে নারীদের ঘুমের ধরনে পুরুষদের থেকে ভিন্নতা দেখা যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘুমের ধরনে তারতম্য হতে পারে। মাসিক ঋতুস্রাব, গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজের মতো বিষয়গুলোতে শরীরে হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে, যা ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে।
উদাহরণস্বরূপ, ঋতুস্রাবের সময় অনেক নারী অনিদ্রা অনুভব করেন। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
মেনোপজের সময় শরীর গরম হয়ে যাওয়া বা রাতের বেলা ঘাম হওয়ার মতো সমস্যাগুলোও ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
পুরুষদের তুলনায় নারীদের ঘুমের কিছু সমস্যা বেশি দেখা যায়। যেমন, ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা, অস্থির পা সিন্ড্রোম এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া—এসব সমস্যা নারীদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের ইনসোমনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৫৮ শতাংশ বেশি।
এছাড়াও, নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে ঘুমের অভাব একটি বড় সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর নতুন মায়েরা নতুন বাবার চেয়ে গড়ে ৪২ মিনিট বেশি সময় ধরে ঘুমের ঘাটতিতে ভোগেন।
ঘুমের এই ভিন্নতা বা প্রয়োজনীয়তা বোঝার জন্য হরমোনের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইস্ট্রাডিওলের মতো হরমোন ঘুমের ধরন ও সময়কে প্রভাবিত করে।
জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে হরমোনের এই পরিবর্তনের কারণে নারীদের ঘুমের ধরনে পার্থক্য দেখা যায়।
ঘুমের গুরুত্ব বিবেচনা করে, বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য ঘুমের একটি নির্দিষ্ট চাহিদা রয়েছে। সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
কিশোর-কিশোরীদের জন্য এই ঘুমের সময়সীমা ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা এবং শিশুদের জন্য ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা।
ঘুমের অভাব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই ভালো ঘুমের জন্য কিছু বিষয় অনুসরণ করা যেতে পারে।
ঘুমানোর আগে ক্যাফিন ও অ্যালকোহল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করা, ঘুমের একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা এবং ঘুমানোর পরিবেশ শান্ত ও আরামদায়ক রাখা প্রয়োজন।
পরিশেষে, যদিও নারী ও পুরুষের ঘুমের প্রয়োজনীয়তা একই, তবে হরমোনের প্রভাব এবং জীবনযাত্রার কিছু বিশেষ দিকের কারণে নারীদের ঘুমের ধরনে ভিন্নতা দেখা যায়।
পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: Healthline