মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মেডিকেয়ার-এর বেসরকারিকরণ নিয়ে বিতর্ক: এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো কী?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা চলে আসছে। দেশটির বয়স্ক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থা হলো মেডিকেয়ার।
বর্তমানে এই মেডিকেয়ার ব্যবস্থা সরকারিভাবে পরিচালিত হয়। তবে, এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক চলছে – মেডিকেয়ার-কে কি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত? এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মেডিকেয়ার আসলে কী?
মেডিকেয়ার হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল স্বাস্থ্য বীমা প্রোগ্রাম, যা মূলত ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিক এবং কিছু বিশেষ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি, বহির্বিভাগের চিকিৎসা, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার খরচ বহন করা হয়।
বর্তমানে, মেডিকেয়ার মূলত ফেডারেল সরকারের অর্থায়নে চলে। তবে, এই ব্যবস্থায় ঔষধের খরচ কভার করার জন্য ব্যক্তিরা চাইলে বেসরকারি বীমা কোম্পানির কাছ থেকে আলাদাভাবে বীমা কিনতে পারেন।
এছাড়াও, মেডিকেয়ারের সুবিধাভোগীদের জন্য আরেকটি বিকল্প রয়েছে – মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ প্ল্যান। এই প্ল্যানগুলো মেডিকেয়ার অনুমোদিত বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো সরবরাহ করে।
এই প্ল্যানগুলো মূল মেডিকেয়ারের মতোই সুবিধা দেয়, সেই সঙ্গে অনেক সময় প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধের খরচ এবং অতিরিক্ত কিছু সুবিধা যেমন – চোখের চিকিৎসা, দাঁতের চিকিৎসা এবং শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের সুবিধাও দিয়ে থাকে।
বেসরকারিকরণের ধারণা: সুবিধা ও অসুবিধা
মেডিকেয়ারকে বেসরকারিকরণ করার অর্থ হলো, স্বাস্থ্য বীমার সমস্ত সুবিধাভোগীকে বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে পরিষেবা নিতে বাধ্য করা। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ প্ল্যানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
কেএফএফ (KFF) নামক একটি অলাভজনক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রায় ৩ কোটি ২৮ লক্ষ মানুষ মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ প্ল্যানে নাম লিখিয়েছেন। যা মেডিকেয়ারের সুবিধাভোগীর প্রায় ৫৪ শতাংশ।
এই পরিবর্তনের সম্ভাব্য কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।
সুবিধাগুলো:
* খরচ কমানোর সম্ভাবনা: কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বেসরকারিকরণের ফলে স্বাস্থ্যসেবার খরচ কমতে পারে। বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের জন্য খরচ কমাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে।
* অতিরিক্ত সুবিধা: মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ প্ল্যানগুলোতে প্রায়ই মূল মেডিকেয়ারে উপলব্ধ নয় এমন কিছু অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়, যেমন – দাঁতের চিকিৎসা, চোখের যত্ন এবং শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের সুবিধা।
অসুবিধাগুলো:
* চিকিৎসক নির্বাচনের সীমাবদ্ধতা: মূল মেডিকেয়ারে, আপনি যে কোনও স্বাস্থ্য পেশাদার বা হাসপাতালে যেতে পারেন, যা মেডিকেয়ার গ্রহণ করে। কিন্তু মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ প্ল্যানের ক্ষেত্রে, আপনাকে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা স্বাস্থ্য পেশাদারদের থেকেই চিকিৎসা নিতে হয়। অন্যথায়, চিকিৎসার খরচ বেশি হতে পারে।
* বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে সমস্যা: অনেক মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ প্ল্যানে, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য রেফারেলের প্রয়োজন হয়। এছাড়া, কিছু ঔষধ বা চিকিৎসার জন্য বীমা কোম্পানির পূর্ব অনুমোদন নিতে হতে পারে।
* চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা: সেন্টার ফর মেডিকেয়ার অ্যাডভোকেসি’র ডেভিড এ. লিপশুটজ-এর মতে, মেডিকেয়ার অ্যাডভান্টেজ-এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে অনেক সময় সমস্যা হয়। বিশেষ করে, যাদের স্বাস্থ্যগত জটিলতা বেশি, তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতে বেগ পেতে হয়।
অনেক ক্ষেত্রে, বীমা কোম্পানিগুলো চিকিৎসার খরচ দিতে অস্বীকার করে অথবা চিকিৎসা মাঝপথে বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা?
যুক্তরাষ্ট্রের এই বিতর্ক থেকে বাংলাদেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ধারণা পেতে পারে। বাংলাদেশে যদিও সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে, স্বাস্থ্যখাতে বেসরকারি বীমার প্রসার ঘটানো বা সরকারি স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থার পরিবর্তনের মতো কোনো পদক্ষেপ নিলে, তা কীভাবে মানুষের স্বাস্থ্যসেবার সুযোগকে প্রভাবিত করতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যেতে পারে।
বেসরকারিকরণের ফলে একদিকে যেমন খরচ কমতে পারে, তেমনি অনেক সময় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। তাই, এই ধরনের পরিবর্তনের আগে এর ভালো-মন্দ দিকগুলো ভালোভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন