চীনের শীর্ষনেতা শি জিনপিং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে তৎপরতা চালাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে যখন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে বাণিজ্য শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একদিকে যখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে, তখন এই ঘটনা আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করা এবং চীনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরা।
বৈঠকে ফেডেক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ সুব্রামানিয়াম এবং কোয়ালকমের ক্রিস্টিয়ানো আমন সহ চল্লিশের বেশি শীর্ষস্থানীয় নির্বাহী উপস্থিত ছিলেন। শি জিনপিং তাদের চীনে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়ার বরাত দিয়ে জানা যায়, শি জিনপিং চীনকে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি “আদর্শ, নিরাপদ এবং প্রতিশ্রুতিশীল গন্তব্য” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের এই পদক্ষেপের মূল কারণ হলো বিদেশি বিনিয়োগে বড় ধরনের পতন। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (Foreign Direct Investment – FDI) ২০ শতাংশ কমেছে।
গত বছর, বিদেশি বিনিয়োগে ২৭.১ শতাংশ পতন হয়ে প্রায় ১১ হাজার ৩৪০ কোটি ডলারে নেমে আসে, যা ২০১৬ সালের পর সর্বনিম্ন।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব সম্ভবত চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে প্রস্তুত হচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি চীনের বিরুদ্ধে নতুন করে বাণিজ্য শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিতে পারেন।
এই পরিস্থিতিতে, চীনের পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই দুই প্রধান শক্তি, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বাণিজ্য সম্পর্ক এবং তাদের অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তন বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
উদাহরণস্বরূপ, চীনের বাজারে কোনো পণ্যের চাহিদা কমলে, তা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে প্রভাব ফেলতে পারে। আবার, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, তার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যে।
শুধু তাই নয়, চীন থেকে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেলে, এর প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও পড়তে পারে। অনেক বিদেশি কোম্পানি চীন থেকে ব্যবসা গুটিয়ে অন্য দেশে বিনিয়োগ করতে পারে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ তৈরি হতে পারে, যদি সরকার উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করে।
চীনের এই পদক্ষেপের ফলে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা, বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা এবং বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন