ইউক্রেনে নির্বাচনের আয়োজন করতে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে।
খবরটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখনো চলছে এবং শান্তি আলোচনা কার্যত থমকে আছে।
শুক্রবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে পুতিন জানান, এই প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনে ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন’ আয়োজন করা এবং জনগণের আস্থা অর্জনকারী একটি কার্যকর সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এরপর তাদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে মিলে ইউক্রেনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
তবে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র পুতিনের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের সরকার তাদের সংবিধান অনুযায়ী গঠিত হবে।
অন্যদিকে, প্যারিসে এক সম্মেলনে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে, ইউক্রেনে খনিজ সম্পদ ও বিরল মৃত্তিকা যৌথভাবে ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত চুক্তির নতুন শর্ত নিয়েও আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, নতুন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে শর্তগুলো অনেক বেশি রাখা হয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, একটি যৌথ বিনিয়োগ তহবিল গঠন করা হবে এবং ইউক্রেনকে দেওয়া সাহায্যের অর্থ ও তার ওপর ৪ শতাংশ সুদ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে খনিজ সম্পদ কেনার সুযোগ পাবে।
এরপর কেবল ইউক্রেন এই তহবিলের লাভ থেকে অংশ নিতে পারবে।
এর আগে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন, তখন একটি ৫০/৫০ অংশীদারিত্বের প্রস্তাব ছিল।
ইউক্রেনের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সুইরিডেনকো প্রস্তাবিত শর্তগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে রাজি হননি।
তিনি জানান, জনসমক্ষে আলোচনা হলে দেশের অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব পাওয়া গেছে এবং ইউক্রেন এর প্রতিক্রিয়ার খসড়া তৈরি করছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল উইটনেস’ যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবিকে চরম হিসেবে বর্ণনা করেছে।
সংস্থাটির প্রচারাভিযান পরিচালক ডমিনিক কাভাকেব বলেন, প্রস্তাবিত শর্তগুলো হলো ‘পুতিনের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাঁচতে ইউক্রেনকে নির্লজ্জভাবে শোষণের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত।
এটি নয়া-উপনিবেশবাদের নগ্ন রূপ।’
ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করার পর ইউক্রেন সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে নির্বাচন স্থগিত করে দেয়।
জেলেনস্কির পাঁচ বছরের মেয়াদ গত মে মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল, তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনের এই নির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি তুলে ধরে তাদের অনুকূলে কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান