কানাডার একটি গভীর সমুদ্র খনিজ উত্তোলনকারী সংস্থা, ‘দ্য মেটালস কোম্পানি’ (TMC), বিতর্কিত এক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তারা জাতিসংঘের চুক্তিকে পাশ কাটিয়ে আন্তর্জাতিক জলসীমায় খনিজ উত্তোলনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন পেতে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
পরিবেশবাদীরা এই উদ্যোগকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এবং ‘বহুপাক্ষিকতার প্রতি চরম অবজ্ঞা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বিষয়টি এমন এক সময়ে সামনে এসেছে, যখন গভীর সমুদ্র খনন বন্ধের দাবি জোরালো হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩০টির বেশি দেশের সরকার সমুদ্রের তলদেশ থেকে খনিজ আহরণের আগে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নেই জানিয়ে এই খনন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
বিজ্ঞানীরাও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের জন্য খনিজ উত্তোলনের ফলে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।
সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেরার্ড ব্যারন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “আমরা মনে করি, কাজ শুরু করার মতো পর্যাপ্ত জ্ঞান আমাদের আছে এবং পরিবেশগত ঝুঁকিগুলো ব্যবস্থাপনার প্রমাণ দিতে পারব। আমাদের প্রয়োজন এমন একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যার একটি শক্তিশালী বিধি ব্যবস্থা রয়েছে এবং যারা আমাদের আবেদনটি গুরুত্বের সঙ্গে শুনবে।
সে কারণেই আমরা বিদ্যমান মার্কিন সমুদ্রতলদেশ খনন আইনের অধীনে লাইসেন্স ও পারমিটের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গঠিত আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ (আইএসএ) বর্তমানে জামাইকাতে একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছে। সেখানে তারা সমুদ্রের তলদেশ থেকে তামা ও কোবাল্টের মতো ধাতু উত্তোলনের নিয়মাবলী নিয়ে আলোচনা করছে।
একই সঙ্গে, নিয়ম তৈরির আগেই যদি কোনো খনন আবেদন জমা পড়ে, তাহলে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়েও তারা আলোচনা করছে। আইএসএ কাউন্সিলের বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের নিয়ম চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো আবেদন বিবেচনা করা হবে না।
তবে, এই প্রক্রিয়া এখনো অনেক দূর যেতে বাকি।
টিএমসি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশ থেকে খনিজ উত্তোলনের জন্য অনুসন্ধান ও পারমিট চেয়ে আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তারা আইএসএর পরিবর্তে ১৯৮০ সালের ‘ডিপ সিবেড হার্ড মিনারেল রিসোর্সেস অ্যাক্ট’-এর অধীনে আবেদন করার পরিকল্পনা করছে এবং দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে।
টিএমসি এরই মধ্যে মেক্সিকো ও হাওয়াই দ্বীপের মধ্যবর্তী প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ল্যারিওন-ক্লিপারটন অঞ্চলে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েছে। এই অঞ্চলে পলিমালিক নুডুলসের (বহু ধাতব পদার্থ সমৃদ্ধ ছোট পাথরের মতো জমাট) বিপুল ভাণ্ডার রয়েছে এবং নতুন প্রজাতির সন্ধানও পাওয়া গেছে।
১৯৯৪ সালে ১৬৯টি সদস্য রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অনুমোদনক্রমে আইএসএ গঠিত হয়। আন্তর্জাতিক জলসীমায় খনিজ উত্তোলনের এখতিয়ার তাদের হাতে এবং কীভাবে উত্তোলন করা হবে, সে বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।
গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের প্রচারক লুইসা ক্যাসন বলেছেন, “এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি চরম অবজ্ঞা এবং বহুপাক্ষিকতার প্রতি চরম অপমান।”
গভীর সমুদ্র সংরক্ষণ জোটের আইনি উপদেষ্টা ডंकन কারি বলেছেন, “নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে টিএমসি যেন আন্তর্জাতিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে সমুদ্রতলদেশে খনন করতে চাইছে। এই ধরনের আন্তর্জাতিক সংঘাত, বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে একটি স্থগিতাদেশ প্রয়োজন।”
কোস্টারিকার প্রতিনিধি জর্জিনা মারিয়া গুইলেন গ্রিলো আইএসএর বৈঠকে বলেছেন, “মেটালস কোম্পানির এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে অনুচিত বলে মনে হচ্ছে।”
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান