ভূমিকম্প: মায়ানমারে আঘাত, বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
গত শুক্রবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৩, মায়ানমারের মান্ডালায় ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৭। এই শক্তিশালী ভূমিকম্পের কম্পন শুধু মায়ানমারেই নয়, বরং প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককেও অনুভূত হয়েছে।
মায়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে ভূমিকম্পের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ছবিতে দেখা গেছে, উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। ব্যাংককের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে তিনটি নির্মাণস্থলে, যার মধ্যে একটি বহুতল ভবনও রয়েছে, সেগুলোতে ভূমিকম্পের কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পটি সাগাইং ফল্টে (Sagaing Fault) উৎপন্ন হয়েছিল এবং ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি হওয়ায় এর কম্পন ছিল অত্যন্ত তীব্র। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS)-এর প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, মায়ানমারে প্রায় আট লাখ মানুষ তীব্র কম্পন অনুভূত হওয়া অঞ্চলে বসবাস করে এবং মৃতের সংখ্যা ১,০০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।
ভূমিকম্প কেন হয়?
পৃথিবীর ভূত্বক কতগুলো টেকটোনিক প্লেট বা ভূ-আলোড়ন প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত, যা একটি জigsaw-এর মতো একে অপরের সাথে যুক্ত। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ভূ-পদার্থবিদ মাইকেল স্টেকলারের মতে, এই প্লেটগুলো সাধারণত স্থিতিশীল থাকে, তবে এদের প্রান্তগুলো সব সময় নড়াচড়া করে। প্লেটগুলো যখন আটকে যায়, তখন সেখানে চাপ তৈরি হয়।
এই চাপ কয়েক দশক বা শত বছর ধরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, এবং তারপর হঠাৎ করেই প্লেটগুলো স্থান পরিবর্তন করে, যার ফলে ভূমিকম্প হয়।
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি
বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের সম্ভাব্য স্থান সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারেন, কিন্তু তারা কখন এটি ঘটবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। তবে, মূল ভূমিকম্পের পর, কাছাকাছি অঞ্চলে ছোট ছোট কম্পন (আফটারশক) হতে পারে।
উইল ইয়েক, ইউএসজিএস-এর একজন ভূমিকম্পবিদ, জানিয়েছেন, মূল কম্পনের কারণে পৃথিবীর অভ্যন্তরে চাপের পরিবর্তনের ফলে আফটারশকগুলো সৃষ্টি হয়। মায়ানমারের ভূমিকম্পের কারণে সম্ভবত আগামী কয়েক মাস ধরে আফটারশক হতে পারে।
ভূমিকম্পের সময় করণীয়
যেসব অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রবণতা বেশি, যেমন ক্যালিফোর্নিয়া ও জাপানে, সেখানে ভূমিকম্প সহনীয় করে ভবন নির্মাণের নিয়মকানুন তৈরি করা হয়। তবে সব জায়গায় একই ব্যবস্থা নেই।
ভূমিকম্প হলে আপনার অবস্থানের উপর নির্ভর করে পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণত, ঘরের ভেতরে থাকলে দ্রুত মাটিতে বসে যাওয়া উচিত, কোনো মজবুত আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে এবং সেটিকে ধরে রাখতে হবে। কাঁচের জানালা ও লিফট থেকে দূরে থাকতে হবে।
বাইরে থাকলে, গাছপালা বা ভবন থেকে দূরে খোলা স্থানে যাওয়া উচিত।
বাংলাদেশের জন্য সতর্কতা
বাংলাদেশও ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ। আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং দুর্বল অবকাঠামোর কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই, ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতনতা এবং প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ভূমিকম্প মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস