অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া গেল ১ কোটি ৬০ লক্ষ বছরের পুরনো জীবাশ্ম, মাছটির শেষ খাবারও অক্ষুণ্ণ।
অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন। দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের একটি স্থানে ১ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগের একটি মাছের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, *ফেরুয়াসপিস ব্রোকসি* নামের এই মাছটির জীবাশ্ম এতটাই ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল যে এর শেষ খাবারটিও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা সেই সময়ের পরিবেশ এবং খাদ্য শৃঙ্খল সম্পর্কে নতুন তথ্য জানতে পারবেন।
নতুন আবিষ্কৃত এই মাছটি অস্মেরিফর্মিস বর্গের অন্তর্ভুক্ত, যা মূলত স্মেল্ট এবং গ্রে-লিং মাছের জ্ঞাতি। এতদিন অস্ট্রেলিয়ায় এই ধরনের মাছের জীবাশ্ম সেভাবে পাওয়া যায়নি। এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে, অনেক আগে থেকেই এই অঞ্চলে এই মাছের প্রজাতি বিদ্যমান ছিল। গবেষকরা জানিয়েছেন, *ফেরুয়াসপিস ব্রোকসি* দেখতে অনেকটা আধুনিক স্মেল্ট মাছের মতোই, সরু গড়নের এবং শরীরের উপরিতল গাঢ় রঙের ও পেটের দিক হালকা।
গবেষকরা মাছটির পেটের ভেতর বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, এটি প্রধানত বিভিন্ন ধরনের মশা-লার্ভা, পোকামাকড়ের ডানা এবং ছোট আকারের শামুক জাতীয় প্রাণী খেত। বিজ্ঞানীরা বলছেন মাছটির খাদ্যাভ্যাস সেই সময়ের খাদ্য শৃঙ্খলের একটি চিত্র তুলে ধরে। তারা আরও জানিয়েছেন, মাছটির শরীরে কিছু বিশেষ কোষ (মেলানোফোরস) পাওয়া গেছে, যা মাছটির আসল রঙের ধারণা দেয়।
আবিষ্কৃত জীবাশ্মের সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে এসেছে। মাছটির লেজের পাখনায় একটি মিঠা পানির ঝিনুক লেগে ছিল। গবেষকদের মতে, যে স্থানে মাছটির জীবাশ্ম পাওয়া গেছে, সেখানকার পরিবেশে ঝিনুকগুলো পূর্ণবয়স্ক হতে পারার কথা নয়। তাই ধারণা করা হচ্ছে, মাছটি সম্ভবত কাছাকাছি কোনো নদীর পানিতে থাকা অবস্থায় পরজীবীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যানবেরার অধ্যাপক এবং ভাইরোলজিস্ট ড. মাইকেল ফ্রেস বলেন, “ম্যাকগ্রাথ ফ্ল্যাটের জীবাশ্মগুলো পরীক্ষা করে আমি বিস্মিত। এই ধরনের বিস্তারিত সংরক্ষণ সত্যিই বিরল, বিশেষ করে একটি মাছের আসল রং খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।”
এই আবিষ্কার শুধু একটি মাছের প্রজাতি নিয়েই নয়, বরং সেই সময়ের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা দেয়। গবেষকরা বলছেন, একসময় নিউ সাউথ ওয়েলস ঘন বনভূমি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। *ফেরুয়াসপিস ব্রোকসি* এর মতো একটি মাছের সন্ধান পাওয়া প্রমাণ করে যে, এই অঞ্চলে মিঠা পানির বাস্তুতন্ত্র বিদ্যমান ছিল। বিজ্ঞানীরা এখন এই অঞ্চলের অন্যান্য জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা করছেন, যা সেই সময়ের পরিবেশ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন