হিউস্টন, টেক্সাসের হ্যারিস কাউন্টি শেরিফ অফিসের কর্মীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই অফিসের চারজন কর্মীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, যা পুরো বিভাগে শোকের ছায়া ফেলেছে।
এই ঘটনাগুলো শুধু একটি অফিসের সমস্যা নয়, বরং এটি আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মহত্যার ঝুঁকির একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে।
শেরিফ অফিসের কর্মকর্তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রোগ্রামের প্রধান টমাস ম্যাকনিস এই ঘটনাগুলোকে একটি “বোমা বিস্ফোরণের” সঙ্গে তুলনা করেছেন। তার মতে, প্রথম ধাক্কাটা লাগে আত্মহত্যার ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই, যা পরিবার এবং বন্ধুদের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি করে।
এরপর, এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে, পুরো বিভাগ, প্রতিবেশী এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকের ঢেউ লাগে। এই শোক যেন সহজে থামতে চায় না।
আত্মহননকারীদের মধ্যে ছিলেন একজন সক্রিয় কর্মকর্তা এবং তিনজন সাবেক কর্মকর্তা। এদের মধ্যে একজন কয়েক বছর আগে এবং অন্যজন প্রায় এক দশক আগে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।
চতুর্থজন ছিলেন, যিনি বর্তমানে কর্মরত ছিলেন। এই ঘটনাগুলো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে আত্মহত্যার উচ্চ ঝুঁকির বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।
হ্যারিস কাউন্টি শেরিফ এড গনজালেজ প্রত্যেক কর্মীর প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করে বলেছেন, তার অফিস এখনো “শোকের প্রাথমিক পর্যায়ে” রয়েছে। তিনি সবার প্রতি এই দুঃখজনক ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার, একে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর এবং সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। একটি গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশটিতে ১,২৮৭ জন নিরাপত্তা কর্মী আত্মহত্যা করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে, তবে অনেক ক্ষেত্রে তা প্রকাশ করা হয় না। অন্যান্য পেশার কর্মীদের তুলনায় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি ৫৪ শতাংশ বেশি।
এর কারণ হিসেবে তারা কর্মক্ষেত্রে ক্রমাগত মানসিক চাপ ও আঘাতের শিকার হওয়াকে দায়ী করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবসর গ্রহণের পর অনেক অফিসার তাদের পরিচয়, উদ্দেশ্য এবং সামাজিক সমর্থন হারিয়ে ফেলেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে, অবসরের কয়েক বছরের মধ্যেই তারা আত্মহত্যা করেন।
রাইস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লুস মারিয়া গারসিনি মনে করেন, কর্মজীবনে কর্মকর্তাদের শরীরে যে মানসিক আঘাতগুলো জমা হয়, অবসর গ্রহণের পর সেই আঘাতগুলো তাদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ শতাংশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় এ ধরনের প্রোগ্রাম রয়েছে, তবে অবসর গ্রহণের পর কর্মীদের জন্য এই সুবিধাগুলো সীমিত হয়ে যায়।
হ্যারিস কাউন্টি শেরিফ অফিসের মতো, অনেক সংস্থাই তাদের কর্মীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা অব্যাহত রাখতে চাইছে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা কর্মীদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝিয়ে বলার জন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা প্রয়োজন। তাদের মধ্যে যারা দুর্বলতা প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করেন, তাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার।
এমন কর্মীদের জন্য অফিসের ভেতরে বা বাইরে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এই সঙ্কট মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা যেকোনো মানুষের জন্য অপরিহার্য।
তাই, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া এবং প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে দ্বিধা করা উচিত নয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।