ব্রিটিশ পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় মিথ্যা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কেনিয়ার এক নাগরিকের মামলায় নতুন মোড়। আলী কোলোলো নামের ওই ব্যক্তি, যিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন, এবার লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করেছেন।
অভিযোগ, ব্রিটিশ পুলিশের সরবরাহ করা ভুল তথ্যের কারণেই তার এই দুর্ভোগ।
২০১১ সালে কেনিয়ার একটি দ্বীপে ব্রিটিশ পর্যটক ডেভিড তেবুটকে হত্যার ঘটনা ঘটে। একই ঘটনায় ডেভিডের স্ত্রী জুডিথ তেবুটকে অপহরণ করা হয়।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আলী কোলোলোকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
কোলোলোর আইনজীবীরা জানান, কারাবাসের সময় কোলোলোকে ‘ভয়াবহ’ পরিস্থিতিতে দিন কাটাতে হয়েছে। ২০২৩ সালে তার সাজা বাতিল করা হয় এবং তিনি মুক্তি পান।
কোলোলোর প্রধান অভিযোগ, মেট্রোপলিটন পুলিশ কেনিয়ার আদালতে ভুল তথ্য সরবরাহ করে, যা তার মিথ্যা বিচারের কারণ হয়।
বিশেষ করে, পায়ের ছাপ সংক্রান্ত একটি বিশ্লেষণকে কেন্দ্র করে পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
মামলার প্রথম ধাপ শুক্রবার সেন্ট্রাল লন্ডন কাউন্টি আদালতে শুনানির জন্য ধার্য করা হয়েছে।
আদালতের নথিপত্র থেকে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেনিয়ায় মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মকর্তাদের পাঠানোর অনুমতি দিয়েছিল, যদিও তারা জানত এই মামলার ফল মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
কোলোলোর আইনজীবী সংস্থা ‘রিপ্রাইভ’-এর মতে, সরকারের এই পদক্ষেপ ছিল তাদের নিজস্ব বিধিনিষেধের লঙ্ঘন। কারণ, কোনো বিদেশি সরকারকে এমন সহায়তা দেওয়ার নিয়ম নেই, যা মৃত্যুদণ্ডের দিকে সরাসরি পরিচালিত করে।
রিপ্রাইভের আইনজীবী প্রীথা গোপালান জানান, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে হওয়া ই-মেইল আদান-প্রদান থেকে বোঝা যায়, কোলোলোর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর কর্মকর্তাদের মধ্যে ‘আতঙ্ক’ তৈরি হয়েছিল।
যে দ্বীপে তেবুট দম্পতি ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন, কোলোলো সেখানে মধু সংগ্রহকারী ও কাঠ কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনিই হামলাকারীদের আশ্রয় খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিলেন।
জুডিথ তেবুট পরে এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি বিশ্বাস করেন কোলোলো নির্দোষ এবং স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দারা তাকে ফাঁসিয়েছে।
কোলোলোর আইনজীবীরা সাবেক গোয়েন্দা প্রধান পরিদর্শক নীল হিবার্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তিনি এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছেন যা মামলার অভিযোগের ভিত্তি দুর্বল করে দেয়।
আদালতে পায়ের ছাপের যে প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছিল, তা নিয়ে পুলিশের বিশ্লেষণ অসম্পূর্ণ ছিল এবং কোলোলোর জুতার সঙ্গে সেই পায়ের ছাপের মিল ছিল না।
এমনকি ঘটনার দিন কোলোলো খালি পায়ে ছিলেন বলেও জানান।
প্রীথা গোপালানের মতে, মেট্রোপলিটন পুলিশের দেওয়া সমর্থন এবং হিবার্ডের সাক্ষ্যই ছিল কোলোলোকে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে ‘শেষ পেরেক’। তিনি আরও বলেন, “পায়ের ছাপের ওপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে এমন বিশ্লেষণ ছিল যা সেই প্রমাণকে দুর্বল করে দেয়।”
পুলিশের আচরণ নিয়ে তদন্তকারী সংস্থা আইওপিসি (IOPC) জানিয়েছে, হিবার্ড যদি এখনো দায়িত্বে থাকতেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ আনা যেত।
কিন্তু তিনি অবসর গ্রহণ করায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ই-মেইল থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছিল যে, কেনিয়ায় মৃত্যুদণ্ডের আইন এখনো বহাল আছে এবং এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এরপরও কেনিয়ায় পুলিশ পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রীথা গোপালান বলেন, এই ঘটনার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “যুক্তরাজ্য সরকার কি এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সহযোগী হচ্ছে?
অতীতে তারা কি কোনো শিক্ষা নেয়নি?”
এদিকে, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডায়ানা জনসন জানিয়েছেন, পুলিশ আইনের অধীনে স্বরাষ্ট্র সচিব বিদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাঠানোর অনুমতি দেন।
মেট্রোপলিটন পুলিশ বর্তমানে চলমান মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।