শিরোনাম: গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ডেনমার্ক-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ফাটল?
ডেনমার্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গ্রিনল্যান্ডকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ডেনমার্কের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা গ্রিনল্যান্ডের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করেনি। এর প্রতিক্রিয়ায় ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লওক রাসমুসেন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং এই ধরনের ‘আচরণ’কে দুই দেশের মধ্যেকার ‘বন্ধুত্বের পরিপন্থী’ বলে অভিহিত করেছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স গ্রিনল্যান্ড সফরকালে অভিযোগ করেন, ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত কাজ করেনি। তিনি আরও বলেন, গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তা কাঠামোতেও তারা বিনিয়োগের অভাব ঘটিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলোর গ্রিনল্যান্ডের উপর কৌশলগত নজর রয়েছে। তাই তারা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে। ভ্যান্স গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাসমুসেন যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ডেনমার্ক এরই মধ্যে আর্কটিক অঞ্চলের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ডেনমার্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ১৯৫১ সালের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি বিদ্যমান। এই চুক্তির অধীনে, গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র তাই চায়, তবে ডেনমার্ক আলোচনা করতে প্রস্তুত।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনও যুক্তরাষ্ট্রের এই মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন। তিনি ডেনমার্ককে ‘ভালো এবং শক্তিশালী মিত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেন। ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের সঙ্গে ডেনিশ সৈন্যদের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে কঠিন পরিস্থিতিতে আমেরিকানদের পাশে ছিলাম।’
এদিকে, গ্রিনল্যান্ডের স্থানীয় সরকারও যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো একটি নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে জোটবদ্ধ হয়েছে, যা বাইরের যেকোনো চাপ মোকাবিলায় প্রস্তুত। গ্রিনল্যান্ডের নেতারা মনে করেন, এই মুহূর্তে তাদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজন।
জানুয়ারি মাসেই ডেনমার্ক আর্কটিক অঞ্চলের নিরাপত্তা বাড়াতে ১৪.৬ বিলিয়ন ড্যানিশ ক্রোন (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি) বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে নতুন নৌ জাহাজ, অত্যাধুনিক ড্রোন এবং স্যাটেলাইট কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড বহন করে।
গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন খনিজ তেল ও গ্যাসের সম্ভাবনা, এই অঞ্চলের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ডেনমার্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান এই বিরোধ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা