আর্জেন্টিনার একজন প্রবীণ নারী, যিনি আসন্ন অবসরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, দেশটির পেনশন নীতিতে পরিবর্তনের কারণে এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। নিলদা রিভাদেনেইরা নামের এই নারীর বয়স ৫৯ বছর।
তিনি রাজধানী বুয়েনস আইরেসের কাছাকাছি অঞ্চলে বসবাস করেন এবং জীবন ধারণের জন্য একাধিক কাজ করেন। তিনি মূলত পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন এবং একই সঙ্গে সেলাইয়ের কাজও করেন।
আগস্ট মাসে তার ৬০ বছর বয়স হবে, যা আর্জেন্টিনার নারী শ্রমিকদের জন্য অবসর গ্রহণের বয়স। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মেইলেই সরকারের একটি সিদ্ধান্তের কারণে তিনি এখন তার পেনশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
আর্জেন্টিনায়, যারা নিয়মিতভাবে তাদের পেনশন স্কিমে অর্থ জমা দিতে পারেননি, তাদের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। এই ব্যবস্থার অধীনে, শ্রমিকরা তাদের পেনশনের কিস্তি পরিশোধ করে অবসরের জন্য যোগ্য হতে পারতেন।
এই স্কিমটিকে ‘পেনশন ঋণ পরিশোধ পরিকল্পনা’ বা পেনশন মরাটোয়াম বলা হত। তবে, মেইলেই সরকার এই স্কিমটি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর ফলে নিলদার মতো বহু শ্রমিক, যারা তাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক বছর ধরে পেনশন স্কিমে নিয়মিত অর্থ জমা দিতে পারেননি, তারা এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
নিলদা জানান, তিনি অল্প বয়সে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন এবং খুব দ্রুতই মা হন। এই কারণে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।
তিনি প্রায় ১৭ বছর আনুষ্ঠানিক খাতে এবং প্রায় ২০ বছর অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেছেন। কিন্তু তার এই কাজের সময়কাল, পেনশন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৩০ বছরের হিসাবের সঙ্গে মেলে না।
আর্জেন্টিনার শ্রমবাজারের একটি বড় অংশ এখনো অনানুষ্ঠানিক। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ৩৬.১ শতাংশ শ্রমিক এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত।
নিলদার মত কর্মীদের অভিযোগ, তারা যখন তাদের নিয়োগকর্তাদের কাছে পেনশনের বিষয়ে জানতে চান, তখন অনেক সময় তাদের কাজ হারানোর ভয় দেখানো হয়।
নিলদা মনে করেন, পেনশন পেতে তার প্রায় ৫,০০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ লক্ষ টাকার বেশি) প্রয়োজন। কিস্তি পরিশোধের সুযোগ না থাকলে, আগস্ট মাসের মধ্যে তাকে এই পুরো টাকা পরিশোধ করতে হবে, যা তার জন্য প্রায় অসম্ভব।
আর্জেন্টিনার পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যদিও এই ব্যবস্থার অধীনে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার প্রায় ৯৫ শতাংশ কোনো না কোনো পেনশন পান, তবে এর ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি।
গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির মোট জিডিপির ১০ শতাংশের বেশি অর্থ পেনশন খাতে ব্যয় হয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৭৮ লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত ও পেনশনভোগী রয়েছেন।
এর মধ্যে প্রায় ২২ শতাংশ কোনো ধরনের চাঁদা জমা ছাড়াই পেনশন পান।
নিলদা যদি তার পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে তিনি বয়স্ক নাগরিকদের জন্য একটি বিশেষ পেনশন (PUAM) পাওয়ার যোগ্য হবেন। এই পেনশন হলো সর্বনিম্ন পেনশনের ৮০ শতাংশ, যা প্রায় ২২০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২৫,০০০ টাকার কাছাকাছি)।
তবে এই সুবিধা পেতে হলে তার বয়স ৬৫ বছর হতে হবে।
নিলদা চান তিনি সুস্থ থাকুন এবং কাজ করে যেতে পারেন। কারণ, তার পরিবারের জন্য এখনো অনেক কিছু করার আছে।
তার নাতি-নাতনিদের ভালো কিছু খাওয়াতে বা সিনেমা দেখাতে তার ভালো লাগে। তিনি চান, কোনো শারীরিক সমস্যা ছাড়াই যেন তিনি কাজ করে যেতে পারেন।
তথ্য সূত্র: CNN