বিতর্কিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অ্যান্ড্রু টেটের বিরুদ্ধে নতুন মামলা, প্রাক্তন প্রেমিকার গুরুতর অভিযোগ
সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীবাদী মন্তব্য করে পরিচিত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব অ্যান্ড্রু টেটের বিরুদ্ধে এবার যৌন নিপীড়ন ও মারধরের অভিযোগ এনেছেন তার প্রাক্তন প্রেমিকা। লস অ্যাঞ্জেলেসে দায়ের করা এই মামলায় টেটের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগকারী, ব্রায়ানা স্টার্ন, জানিয়েছেন, টেট তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে, এই ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন টেট তাকে তার সাথে সম্পর্ক গড়তে রাজি করান।
স্টার্নের ভাষ্যমতে, প্রথমে টেট ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ করতেন, কিন্তু পরে তা নির্যাতনের রূপ নেয়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, চলতি মাসের শুরুতে বেভারলি হিলস হোটেলে তাদের মধ্যে একটি ঘটনা ঘটে। স্টার্ন জানান, সেখানে টেট তাকে মারধর করেন এবং শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেন।
ঘটনার পর তিনি মস্তিষ্কে আঘাত পান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
টেটের আইনজীবী জোসেফ ম্যাকব্রাইড এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি স্টার্ন ও তার আইনজীবীদের বিরুদ্ধে টেটের বিরুদ্ধে ওঠা বিতর্ককে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করার অভিযোগ এনেছেন।
ম্যাকব্রাইড একে “অর্থ আদায়ের চেষ্টা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক অ্যান্ড্রু টেট এবং তার ভাই, ট্রিস্টান টেট, বর্তমানে মানব পাচার ও যৌন শোষণের অভিযোগে রোমানিয়ার একটি মামলার আসামি। এর আগে, ২০২২ সালের শেষের দিকে তাদের রোমানিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
যদিও তারা তাদের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ব্রায়ানা স্টার্নের দাবি, তিনি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে টেটের সঙ্গে পরিচিত হন। টেটের ভাইয়েরা তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রচারের জন্য মডেল খুঁজছিলেন এবং সেই সূত্রে তার সাথে তাদের দেখা হয়।
স্টার্ন জানান, টেট তাকে বুঝিয়েছিলেন যে গণমাধ্যমে তার সম্পর্কে যা বলা হয়, তা ভুল। টেট নাকি নারীদের সমর্থন করেন। স্টার্নের মতে, প্রথমে তার কাছে বিষয়টি “স্বপ্নের মতো” মনে হয়েছিল।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেরার পর টেটের আচরণে পরিবর্তন আসে। তিনি স্টার্নকে তার “সম্পত্তি” বলে উল্লেখ করতে শুরু করেন এবং তাকে মারধর ও গর্ভবতী করার ইচ্ছার কথা জানান। মামলার নথিতে এমন অনেক বার্তা যুক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, টেটের আইনজীবী এই বার্তাগুলোকে “বিকৃত, সম্পাদিত ও মিথ্যা” বলে দাবি করেছেন।
আদালতে পেশ করা নথিতে স্টার্ন আরও জানিয়েছেন, হোটেলে তাদের শেষ সাক্ষাতে টেট তাকে মারধর করেন এবং যৌন মিলনের সময় শ্বাসরোধ করেন।
স্টার্নের অভিযোগ, টেট তাকে বলেছিলেন, “যদি কখনো তার কথা না শোনেন, তবে তিনি তাকে মেরে ফেলবেন।”
সাবেক কিকবক্সার এবং নিজেকে নারীবাদী হিসেবে পরিচয় দেওয়া ৩৮ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু টেটের অনলাইনে কয়েক মিলিয়ন অনুসারী রয়েছে, যাদের অধিকাংশই তরুণ। ঘৃণা ভাষণ ছড়ানোর কারণে তাকে একসময় টিকটক, ইউটিউব ও ফেসবুক থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
টেট এবং তার ভাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবেও পরিচিত।
বর্তমানে টেটের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যেও আরও কয়েকটি মামলা চলছে। সেখানে চারজন ব্রিটিশ নারী তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও অন্যান্য অভিযোগ এনেছেন।
ব্রায়ানা স্টার্ন সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, তিনি টেটের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। তবে, তিনি মনে করেন, চুপ করে থাকলে তা “কাপুরুষোচিত” হতো।
স্টার্নের আইনজীবী টনি বুজবি তার “অসাধারণ সাহসিকতার” প্রশংসা করেছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন