গাজায় খাদ্য সংকট: ইসরায়েলি অবরোধের জেরে আসন্ন বিপর্যয়।
গাজা উপত্যকায় খাদ্য, জ্বালানি ও ঔষধের মারাত্মক অভাব দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের অবরোধের কারণে সেখানকার পরিস্থিতি দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা সতর্ক করেছে যে, এক সপ্তাহের মধ্যে গাজার রুটি তৈরির কারখানাগুলোতে আটা ফুরিয়ে যাবে। এর ফলে সেখানকার প্রায় ২০ লক্ষ ফিলিস্তিনিবাসীর জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
গত চার সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, ঔষধ ও অন্যান্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই দীর্ঘতম অবরোধের রূপ নিয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সাহায্যকর্মীরা তাদের সীমিত সরবরাহ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু খাদ্য সরবরাহ দ্রুত ফুরিয়ে গেলে সেখানে চরম খাদ্য সংকট ও অপুষ্টি দেখা দিতে পারে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (World Food Programme) জানিয়েছে, তাদের কাছে থাকা আটা দিয়ে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত দৈনিক আট লক্ষ মানুষের রুটি তৈরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া, তাদের খাদ্য সরবরাহ সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত টিকতে পারে।
জরুরি অবস্থার জন্য তাদের কাছে ৪ লক্ষ ১৫ হাজার মানুষের জন্য পুষ্টিকর বিস্কুটের মজুত রয়েছে।
গাজার বাজারগুলোতে খাদ্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। সবজি পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১৪ মার্কিন ডলার (প্রায় ১,৫০০ টাকার বেশি) এবং এক কেজি টমেটোর দাম ৬ মার্কিন ডলার (প্রায় ৬৫০ টাকার বেশি)।
রান্নার গ্যাসের দাম ৩০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে, ফলে সেখানকার পরিবারগুলো জ্বালানির জন্য কাঠ সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে।
গাজার একটি পরিবার প্রধান, শোরুক শামলাখ, জানান, তারা জাতিসংঘের সাহায্য-নির্ভরশীল। তাদের পরিবারের সদস্যরা খাবার বাঁচানোর জন্য প্রতিদিনের খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছেন।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এই সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে আমরা খাব কী?”
চিকিৎসা পরিষেবাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধের সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়েছে।
সাহায্য সংস্থাগুলো জ্বালানির অভাবে ত্রাণ সরবরাহ করতে পারছে না।
অক্সফামের গাজা বিষয়ক প্রধান ক্লিমেন্স লাগুয়ার্ডাট জানিয়েছেন, “আমাদের এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, যেখানে সবকিছুই জরুরি।”
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (UNRWA)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে আর কয়েক দিনের মতো আটা মজুদ আছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা কিছু কিছু এলাকায় ত্রাণকর্মীদের চলাচলের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে, তবে এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গাজার শিক্ষক আবেইর আল-আকের বলেন, “এখানে কোনো খাবার নেই, কোনো পরিষেবা নেই। আমি মনে করি, আবার দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এই অবরোধকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
গাজায় খাদ্য সংকট ও মানবিক বিপর্যয় নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস