দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ দাবানল, বয়স্কদের সমাধিস্থল পরিষ্কার করতে গিয়েই কি অগ্নিকাণ্ড?
দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ দাবানলের ঘটনায় হতবাক বিশ্ব। দেশটির ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করা এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে সম্ভবত এক ব্যক্তির অসাবধানতাবশত করা একটি ভুলের কারণে।
জানা গেছে, নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন, যাদের মধ্যে একজন হেলিকপ্টার পাইলটও রয়েছেন। তীব্র বাতাস আর শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে প্রায় ৪৮ হাজার হেক্টরের বেশি বনভূমি ভস্মীভূত হয়েছে।
খবর অনুযায়ী, উত্তর গিয়ংসাং প্রদেশের ইউইসেং-এ গত ২২শে মার্চ, ৫৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি তাঁর দাদা-দাদির সমাধিস্থল পরিষ্কার করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, সমাধিস্থলের আশেপাশে ঝুলে থাকা গাছের ডালপালা পোড়ানোর সময় অসাবধানতাবশত আগুন লেগে যায়।
এরপর সেই আগুনই দাবানলের রূপ নেয়। ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে, তবে তাকে এখনই হেফাজতে নেওয়া হয়নি।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। দাবানলের কারণে ইউইসেং-এর গোউনসা মন্দির কমপ্লেক্সের মতো বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থানও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যা সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরেই ওই অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ওপর তীব্র বাতাস পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।
বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকেও এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করছেন। তাঁদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এমন চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো আরও বাড়বে।
এই ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার গ্রামীণ অঞ্চলের জনমিতিক সংকট এবং আঞ্চলিক বৈষম্যকেও সামনে নিয়ে এসেছে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব কমে যাওয়ার কারণে গ্রামীণ এলাকাগুলো আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু দক্ষিণ কোরিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা।
বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলোতেও এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।
তাই এখনই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান