মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘DOGE’ নিয়ে বিতর্ক: আসলে কি এটি কোনো সরকারি সংস্থা?
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ‘DOGE’। মূলত, ইলন মাস্কের তত্ত্বাবধানে সরকারি কাজের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে গঠিত এই সংস্থাটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি সত্যিই কোনো সরকারি সংস্থা, নাকি এর অন্য কোনো পরিচয় আছে?
এই প্রশ্নের উত্তরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ওপর নির্ভর করছে সরকারি কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা।
গত দুই মাসে, মাস্কের ‘DOGE’ ফেডারেল সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা নিরীক্ষণের নামে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, সরকারি কার্যক্রমে কাটছাঁট এবং পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মামলাও হয়েছে।
বিচারকরা যখন ‘DOGE’-এর কার্যক্রম এবং সরকারি কাঠামোর ওপর এর প্রভাব খতিয়ে দেখছেন, তখন তাদের প্রধান প্রশ্ন হলো, ‘DOGE’ কি আসলে একটি সরকারি সংস্থা?
যদি ‘DOGE’-কে সরকারি সংস্থা হিসেবে গণ্য করা হয়, তাহলে এর কার্যক্রমের ওপর জনগণের নজরদারির সুযোগ তৈরি হবে। তথ্য অধিকার আইনের (Freedom of Information Act – FOIA) অধীনে, সাধারণ মানুষ ‘DOGE’-এর অভ্যন্তরীণ নথিপত্র দেখতে পারবে।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে বলছে, সরকারি কাটছাঁটের মূল কারণ হলো বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, ‘DOGE’-এর উদ্যোগ নয়। যদিও জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাবমূর্তি ছিল ভিন্ন। সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্যও এক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল সার্ভিস (US Digital Service – USDS)-এর মাধ্যমে ‘DOGE’-কে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে, বেশ কয়েকটি মামলায় ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে যে ‘DOGE’-এর কোনো কেন্দ্রীয় সংগঠন বা ক্ষমতা নেই।
তাদের মতে, ‘DOGE’-এর নেতারা কেবল পরামর্শদাতা, এবং ফেডারেল ব্যুরোক্র্যাসিতে অন্তর্ভুক্ত কর্মীরা মূলত তাদের সংশ্লিষ্ট সংস্থাতেই কাজ করেন।
আদালতে পেশ করা একাধিক সরকারি কর্মকর্তার হলফনামায় বলা হয়েছে, মাস্কের ‘DOGE’-তে কোনো আনুষ্ঠানিক পদ নেই এবং সরকার সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও ক্ষমতা নেই। তাদের মতে, মাস্ক কেবল প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেন।
তবে, অনেক বিচারক এই যুক্তিতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং সরকারি কর্মকর্তাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করছেন।
জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়া সোমিন বলেন, “আদালতকে কি কাগজের ওপর লেখা এই বর্ণনা মেনে নিতে হবে, নাকি তারা আসল ঘটনা খতিয়ে দেখতে পারবে?”
সম্প্রতি, কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনের কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, বিচারকরা মনে করছেন, ‘DOGE’-এর কার্যক্রম সম্পর্কে নতুন ব্যাখ্যাগুলো আরও বেশি প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
সংবিধানের নিয়োগ সংক্রান্ত ধারা অনুসারে, কিছু সরকারি কর্মকর্তার সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়, যারা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। কিছু আইনি চ্যালেঞ্জে অভিযোগ করা হয়েছে যে মাস্ক এবং তার সহযোগীরা ব্যাপক ছাঁটাই, তহবিল স্থগিত এবং সরকারি চুক্তি বাতিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা ক্ষমতার বিভাজন নীতির লঙ্ঘন।
এই বিতর্কের মধ্যে, ‘DOGE’-এর ক্ষমতাকে সীমিত করার জন্য সংবিধানের এই ধারাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আদালত এখন দেখছে, ‘DOGE’-এর কার্যক্রম স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার আওতায় আসে কিনা।
এই মামলার রায় ভবিষ্যতে সরকারি সংস্থাগুলোর ক্ষমতা এবং জনগণের তথ্যের অধিকারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন